ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২১ মহররম ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শহীদ ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৭, জুলাই ১৬, ২০২৫
শহীদ ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত'র মা

চট্টগ্রাম: 'আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। ছেলেকে এখন আর ফিরে পাবো না।

কিন্তু আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার যেন ও মাটিতে হয়। '

বুধবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলেছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত'র মা মোছা. কহিনুর আক্তার।

ছেলের চলে যাওয়ার সেদিনের কঠিন মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শান্ত’র মা বললেন, ‘ওর টিউশনি ছিল বিকেল ৩টা থেকে। তবে আন্দোলনে যোগ দিতে এক ঘণ্টা আগেই সেই টিউশনি শেষ করে ছেলে। তারপর আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় মুরাদপুরে। বিদায়ের সময় বলে যায়- মা আমি চলে আসবো সন্ধ্যায়। চা আর পরোটা বানিয়ে রেখো। ’

সন্ধ্যার দিকে ছেলের বড় পছন্দের চা-পরোটা বানাচ্ছিলেন মা কহিনুর। এমন সময়ে আসে ফোনটা। পরিচিত একজন ফোন করে দ্রুত তৈরি হতে বলেন। জানান, শান্ত’র গায়ে গুলি লেগেছে; যেতে হবে হাসপাতালে। তখনও কহিনুর জানেন না ছেলের অন্তিম পরিণতির কথা। ভেবেছেন পুলিশ হয়তো রাবার গুলি ছুড়েছে, সেটি শান্ত’র পায়ে লেগেছে। দ্রুতই চলে আসেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু এসে কোনমতেই ছেলের কাছে যেতে পারেন না কহিনুর।

সেদিনের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কহিনুর বলেন, ‘এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে বারবার আমাকে জেরা করে নানা কিছু জেনে নেন, কিন্তু কোনোভাবেই আমার ছেলের হদিস দেন না। একপর্যায়ে পুলিশ আমাকে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যায়। সেখানে বিভিন্ন কাগজে সই করতে বলে। তখনই বুঝতে পারি ময়নাতদন্তের জন্য অনুমতিপত্রে আমার সই নেওয়া হচ্ছে। বুকটা ভেঙে যায় আমার। জানতে পারি, আমার ছেলের পায়ে নয়, গুলি করা হয়েছে বুকে। এরপর আমি জ্ঞান হারাই। ’

তিনি ‘আমার ছেলে রক্তকে খুব ভয় পেতো। সেজন্য কোরবানে গরু জবাই করার সময় আমরা তাকে লুকিয়ে রাখতাম। বাসায় কখনও ওর ভয়ে মুরগি জবাই করতাম না। আমার সেই নিরীহ ছেলেটাকে গুলি করে রক্তাক্ত করা হলো। আবার সেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন গায়ে ময়নাতদন্তের নামে কাটাকুটো করা হলো। কত অনুরোধ করলাম, শুনেনি।

মায়ের আরও একটি আফসোস ফুরায় না। সেটি হলো- খুব ইচ্ছে ছিল শান্ত’র কবর হবে তারই প্রিয় চট্টগ্রাম শহরে। কিন্তু তখনকার প্রশাসন সেই অনুরোধ রাখেনি। এমনকি যে শহরের আলো-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছে শান্ত, সেই শহরে তার নামাজে জানাজাও পড়তে দেওয়া হয়নি। মা সেসব মন খারাপের কথা আরেকবার শুনিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলের মরদেহ পুলিশ প্রটোকল দিয়ে বরিশালের বাবুগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছে। আহ! এভাবে যদি বেঁচে থাকতে নিরাপত্তা দিতো, হাজারো মায়ের বুক খালি হতো না! এখন তো আর ছেলেকে পাবো না। শুধু একটাই চাওয়া- যে হাজারো ছাত্রজনতা প্রাণ দিলো, তাদের রক্তের বিনিময়ে যেন বাংলাদেশটা সুন্দরভাবে চলে।

এসময় শহীদ ফারুকের স্ত্রী, শহীদ ওয়াসিমের বাবাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের সন্তান হারানোর সেই কঠিন মুহুর্তের স্মৃতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ও সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপস্থিত ছিলেন।  

বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।