চট্টগ্রাম: শিল্পকলা একাডেমীতে রোববার অনুষ্ঠিত হলো ‘সাংবাদিকদের চোখে জুলাই’ শীর্ষক ব্যতিক্রমধর্মী এক অনুষ্ঠান। জুলাই ঐক্য ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (PUNAB)-এর যৌথ আয়োজনে এই অনুষ্ঠানটি সাংবাদিকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে জুলাই আন্দোলনের তাৎপর্য ও প্রভাব তুলে ধরার এক অনন্য প্রয়াস হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জুলাই আন্দোলন ছিল দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এক মহাসংগ্রাম। সাংবাদিকরা যদি সাহসের সঙ্গে সত্যকে তুলে ধরেন, ইতিহাস কখনও বিকৃত হবে না।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের চোখে জুলাই আন্দোলনের ব্যাখ্যা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকবে। সাংবাদিকরা নিরপেক্ষভাবে ঘটনাবলি তুলে ধরলে তা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও শক্ত করবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান বলেন, ইতিহাসকে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা সাংবাদিকদের বড় দায়িত্ব। জুলাই আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নিয়ে কাজ করার সুযোগ সাংবাদিকদের জন্য এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ। সাহসী সাংবাদিকতাই ইতিহাসকে ভবিষ্যতের জন্য অমর করে তুলবে।
সাংবাদিক ওয়াহিদ জামান বলেন, জুলাই আন্দোলন কেবল রাজপথের বিক্ষোভ নয়, এটি গণমানুষের হৃদয়ের আন্দোলন। সাংবাদিকদের চোখ দিয়েই এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে পারে।
সাংবাদিক জমির উদ্দিন বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে থাকিনি। তখন বারবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হতো, মোবাইল নেটওয়ার্কেও বাধা আসত। কিন্তু আমরা জানতাম এই আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্ত ইতিহাস। তাই খবর সংগ্রহ করে তা পেনড্রাইভে করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছাতাম। সেখান থেকে কোনোভাবে ঢাকার অফিসে পাঠানো হতো সেই রিপোর্ট। এটা শুধু পেশাগত দায় ছিল না, ছিল একজন নাগরিক হিসেবে গণতন্ত্র ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন মাঠে ছিলাম, তখন গুলির শব্দ, লাঠিচার্জ, আতঙ্ক সবকিছুর মধ্যেও সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছি। কারণ জানতাম, যদি আমরা না লিখি, তাহলে কেউ জানবে না কী ঘটেছে। সাংবাদিকতার এই সাহসিকতাই ইতিহাসকে জীবন্ত রাখে।
আয়োজকরা জানান, সাংবাদিকদের দৃষ্টিভঙ্গি যেকোনো আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করে তোলে। তারা যদি জুলাই আন্দোলনের চেতনা সঠিকভাবে তুলে ধরেন, তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে। আমরা চাই সাংবাদিকরা নিরপেক্ষভাবে সত্য প্রকাশের কাজ চালিয়ে যান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক জুবায়ের চৌধুরী, শফিকুল আলম, আল আমিন, ইভান মীর, আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।
ভিন্নধর্মী এই আয়োজনে সাংবাদিকদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে উঠে আসে জুলাই আন্দোলনের অন্তর্নিহিত শক্তি, গণতন্ত্রের সংগ্রাম এবং ভবিষ্যৎ ইতিহাসচর্চার এক নতুন দিগন্ত।
পিডি/টিসি