চট্টগ্রাম: ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নামে ভিন্ন। তবে রোগের লক্ষণে রয়েছে মিল।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করা হয় ডেঙ্গু টেস্টের ফি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এনএস ফর ডেঙ্গু, আইজিজি ফর ডেঙ্গু ও আইজিএম ফর ডেঙ্গু পরীক্ষার সরকারি নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি হলো ৫০ টাকা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটি আদেশে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এনএস ফর ডেঙ্গু, আইজিজি ফর ডেঙ্গু ও আইজিএম ফর ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সিবিসি পরীক্ষা করাতে ফি দিতে হয় ৪০০ টাকা।
ডেঙ্গু নির্ধারণে সরকারি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষায় নেই এমন কোনো নির্দেশনা। ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চলছে দাম বেশি নেওয়ার প্রতিযোগীতা। চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে পাওয়া গেছে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ফি’র ভিন্নতা। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ার আরটি-পিসিআর টেস্ট ফি ৪ হাজার টাকা, এপিক হেলথ কেয়ারে ৫ হাজার ১০০ টাকা, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৫ হাজার টাকা।
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে ডেঙ্গু-করোনা টেস্টের নমুনা ফি নির্ধারণ করা হলেও চিকুনগুনিয়ার ফি নির্ধারণ করা হয়নি। তবে চিকুনগুনিয়া টেস্টের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু টেস্টের মত একই মূল্য নেওয়ার কথা। কারও অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করব।
এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকুনগুনিয়া টেস্ট হলেও কিট সংকটে বন্ধ সরকারি হাসপাতালে এ রোগের টেস্ট। ফলে চমেক ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা গেলেও রক্ত পরীক্ষার জন্য ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিট সংকট উল্লেখ করে ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিপ্তরে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
চিঠিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবরেটরি, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইনফেকসাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি)-এ পিসিআর (আরটি-পিসিআর) ল্যাব থাকলেও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট না থাকায় সরকারি পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়। চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় রোগ নির্ণয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক র্যাপিড টেস্ট কিট সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। রোগ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি মশার ওষুধ ছিটানোতে আরও কার্যকর উদ্যোগ লাগবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের কিট থাকলেও চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের কিট মজুত নেই। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিটের চাহিদা চেয়ে অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এ সমস্যার সমাধান দ্রুতই হবে।
চলতি বছর বুধবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৮৪ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ ৩০ জুলাই শনাক্ত হয়েছে ১০৯ জন। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৮৬৫ জন। এর মধ্যে বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩ জন।
সম্প্রতি এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য চট্টগ্রাম নগরীকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা প্রতিবেদনে, নগরের ছয়টি এলাকায় জরিপ চালিয়ে ১২৮টি বাড়ির মধ্যে ৬২টিতে লার্ভা খুঁজে পায়। যার হার দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া আইইডিসিআরের গবেষণায় লার্ভার ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে নগরের আগ্রাবাদে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ তাদের।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, এবার চিকুনগুনিয়া রোগী ডেঙ্গুর চেয়ে বেশি। আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন জ্বর নিয়ে যত রোগী আসছে, তার মধ্যে ৪০ শতাংশই চিকুনগুনিয়ার রোগী। চেম্বারে প্রতিদিন অর্ধেকের বেশি রোগী আসছে জ্বর নিয়ে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৫০ শতাংশই চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত। চিকুনগুনিয়া রোগীর জ্বর চলে গেলেও জয়েন্ট ব্যথা ও ফোলা দু-তিন মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য কোনো রোগ থাকলে সেক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এমআর/টিসি