ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

৪৬তম কলকাতা বইমেলায় পালিত হলো বাংলাদেশ দিবস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
৪৬তম কলকাতা বইমেলায় পালিত হলো বাংলাদেশ দিবস

কলকাতা: কলকাতার ধাঁচে বাংলাদেশে হোক আন্তর্জাতিক বইমেলা এমনই আবেদন করেছেন কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে।  

অপরদিকে, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ান জায়গা বাড়ানো হোক- এ আবেদন করেছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ছুটির দিনে কলকাতা বইমেলা ভীড়ে ঠাসা। প্রতিবছরের মতো কলকাতা বইমেলায় এদিন পালিত হলো বাংলাদেশ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার বিশিষ্টজনেরা।

অনুষ্ঠানে মাজহারুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই জায়গাটি আমাদের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির। দুই দেশের মধ্যে যে সেতু তৈরি হয়েছে তার মূল ভিত্তিই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ। সেক্ষেত্রে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এই সম্পর্ককে আটকানো যাবে না।

তিনি বলেন, এই বইমেলায় অন্য দেশের প্যাভিলিয়ন আছে কিন্তু বাংলা বইয়ের পাঠকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু শনিবার বিকেলে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের ভিড়ই বলে দিচ্ছে যে বাংলাদেশি বইয়ের পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু স্থান সংকুলানের অভাবে এ বছর ৪৩টি প্রকাশনী সংস্থা এসেছে। এতটাই ভীড় হয়েছে যে স্টলগুলোতে দাঁড়িয়ে বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ নেই। ফলে কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ যাতে বিবেচনা করেন যে পাঠকদের সুবিধার্থে আগামী বছর পাঁচ হাজার বর্গ ফুট জায়গা দেওয়া হয়।  

এসময় পাশে থাকা বইমেলার আয়োজক সুধাংশু শেখর দে’কে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি মনে করি গিল্ড যেভাবে বরাবরের পাশে দাঁড়িয়েছে আগামী বছরও ঠিক এভাবে পাশে দাঁড়াবে। ওনারা যদি উদ্যোগ নেয় তবে আমাদের এই দাবি পূরণ করা সম্ভব।

কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে বলেন, গত বছর কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ থিমকান্ট্রি ছিল। সে বছর অন্যান্য প্রকাশকে কম জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা বইমেলা বাংলাদেশ সব সময় গুরুত্ব পায়। আমার মেলায় একটা নির্দিষ্ট দিনে বাংলাদেশ দিবস পালন করি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা জানি বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ানে প্রতিবছর ভীড় উপচে পড়ে। তাছাড়া
প্রতিবছর বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে জন্য যে জায়গা বরাদ্দ থাকে প্যাভেলিয়ান বানানোর জন্য, তৈরি সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এবছরও বাড়ানো আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব প্রকাশককে এক জায়গায় আনা কখনই সম্ভব নয়। ফলে এর থেকে বেশি বাড়ানো আর সম্ভব নয়। এর কারণ কলকাতার বইমেলা প্রাঙ্গন সীমিত জায়গা। তবে আমি মানছি বাংলাদেশের চাহিদা বেশি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন হয় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে।  

সভাপতি আরও বলন, এবছর আমরা ১২৪ জন প্রকাশককে জায়গা দিতে পারেনি। তাদের কথা দিয়েছি আগামী বছর ৫০ বর্গফুট জায়গা হলেও দেবো। ফলে বুছতেই পারছেন। কলকাতা বইমেলা আপন গতিতে চলছে। এরজন্য কলকাতার পাঠক প্রকাশককের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ জানাই।

কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমবার কলকাতা বইমেলায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশ ক্রমশ তার স্থান বাড়াতে বাড়াতে বিশাল একটা জায়গা করে নিল। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ থিম কান্ট্রি হলো। সেই থেকে বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি চাহিদা তৈরি হলো এপার বাংলার পাঠকদের। বাংলাদেশের বইয়ের পাঠক তৈরি হলো।

আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেওয়ার অংশ হিসেবে ঢাকাতে করতে চাই। এবং ২০২৩ সালে এই মেলা করতে চাই।

তার অভিমত, ২০২৫ সালে স্পেনের মাদ্রিদে বইমেলা ‘ভারত ফোকাল থিম কান্ট্রি নির্বাচিত হয়েছে। সেখানেই আলাদা করে কলকাতাকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। প্রাথমিক ভাবে তাতে সম্মতিও জানানো হয়েছে। তবে তার আগে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে করতে চাই। সেক্ষেত্রে মাদ্রিদে যাওয়ার আগেই ২০২৩ সালে এই মেলা করতে চাই। এ নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকেও তাদের আবেদন সংশ্লিষ্ট মহলে তাদের আবেদন পৌঁছে দেওয়ার আবেদন জানান ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।

বিশিষ্ট কবি বীথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যা ভাষার ভিত্তিকে তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন যে এভাবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, ভাবতে অবাক লাগে সেই ভাষা আমাদের বাংলা ভাষা, আমরা মাতৃভাষা। এই বাংলা ভাষায় দু’বাংলা ভাব প্রকাশ করি, রাগ প্রকাশ করি সেসব লেখার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। তবে হ্যা দুই বাংলা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। অবশ্য ঘেরা নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কেউ যদি বলে পাখির তো সীমানা হয় না। কিন্তু পাখির মনে কোনো সন্ত্রাস বাস করে না।  যা মানুষের মধ্যে আছে, আমাদের মধ্যে আছে। তাই আমাদের ভিসা, পাসপোর্ট,  কাঁটাতারের দরকার হয়। তব আমি মনে করি বাংলাদেশ আমাদের গর্বের দেশ। বাংলাদেশের লোক বলতে আমার নিজেকে গর্ববোধ হয়। আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি বাংলাদেশ তাদের সবার দেশ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ উপ হাই-কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
ভিএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।