ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো ছুটবে ৯ এপ্রিল, যুক্ত হবে হাওড়া-কলকাতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো ছুটবে ৯ এপ্রিল, যুক্ত হবে হাওড়া-কলকাতা

কলকাতা: ফেরি পারাপার, ক্যান্টিলিভার ব্রিজ, ঝুলন্ত সেতুর পর নতুন অধ্যায় মেট্রো রেল। কলকাতায় ১৪৯ বছরের সেতু বিবর্তনের শেষ অধ্যায় শুরু হচ্ছে আগামী ৯ এপ্রিল।

 

এবার শহরে সূচনা হবে এক নতুন ইতিহাসের। কারণ, সেদিন প্রথম গঙ্গা তথা হুগলি নদীর নিচ দিয়ে চাকা গড়াবে মেট্রোরেলে। ফলে আর শুধু সেতু নয়, গঙ্গার নদীর সুড়ঙ্গপথ দিয়ে জুড়ে যাবে হাওড়া-কলকাতা। গোটা ভারতে নদীর নিচ দিয়ে মেট্রোরেলে এমন যাতায়াত এই প্রথম।

১৮৭৪ সাল, ব্রিটিশ উপনিবেশের রাজধানী কলকাতা। ১৯ বছরের চেষ্টায় প্রথমবার সেতু পথে জুড়েছিল দুই শহর, কলকাতা ও হাওড়া। গঙ্গাবুকে তৈরি হয়েছিল প্রথম ভাসমান সেতু। মধ্যখানে ২০০ ফুট খুলে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা ছিল সেই ব্রিজে। কিন্তু গরুর গাড়ির দাপটে বেশিদিন নিশ্চিন্ত থাকতে পারেনি ব্রিটিশরা।

বিস্তর আলোচনা শেষে ১৯৩৭ সালে শুরু হয় ক্যান্টিলিভার সেতুর কাজ। একসময় যার নাম ছিল হাওড়া ব্রিজ। বর্তমানের যার নাম রবীন্দ্র সেতু। ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাতের অন্ধকারে যাত্রীবিহীন ট্রাম চালিয়ে উদ্বোধন হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর সেই বিস্ময়ের। হাওড়া ও কলকাতার যোগাযোগে সেই সেতু দিয়ে সব রকম যানবাহন চলাচল হতো।  
তবে পরে হাওড়া সেতুর উপর চাপ কমাতে ১৯৭৮ সালে নির্মাণ শুরু হয় আরও একটি কেবল-স্টেইড বা ঝুলন্ত সেতুর। যেটি পরিচয় পায় দ্বিতীয় হুগলি সেতু নামে। বর্তমান যার নাম বিদ্যাসাগর সেতু। ১৯৯২ সালে ১০ অক্টোবর সূচনা হয় সেই হুগলি সেতুটির।

কিন্তু, এবার ভারতের মধ্যে প্রথম কলকাতার মুকুটে জুড়তে চলেছে আরও একটি নতুন পালক। আগামী রোববার (৯ এপ্রিল) ইস্ট-ওয়েস্ট রুটে প্রথমবার গঙ্গা সুরঙ্গে চলবে মেট্রোরেল। যদিও এটি ট্রায়াল রান। তবে সব ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই মেট্রোপথ চালু হবে কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান।

এ প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোরেল করপোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিনাথ জয়সওয়াল বলেছেন, ৯ এপ্রিল মেট্রোর ইতিহাসে স্মরণীয় দিন। ওইদিন গঙ্গার নিচ দিয়ে প্রথমবার যাবে মেট্রো। দুটি রেকে হবে ট্রায়াল রান। ট্রায়াল চলবে ছয় মাস। এরপর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন রেল বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সেখান থেকে সবুজ সংকেত বা ছাড়পত্র পেলে চলতি বছরেই গঙ্গার তলা দিয়ে চালু হবে কলকাতার স্বপ্নের মেট্রো পথ।

আপাতত হাওড়া ময়দান থেকে কলকাতার এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মেট্রো চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পরে কলকাতার বউবাজার এলাকার মাটির তলার মেট্রোর কাজ শেষ হলে শহরের বৃহত্তর মেট্রোরের সাথে জুড়ে যাবে গঙ্গাবঙ্গের মেট্রোপথ। অর্থাৎ হাওড়া ব্রিজের পর এই প্রথম বাংলার দুই যমজ শহর হাওড়া ও কলকাতা জুড়ে যাবে মেট্রোরেলের মাধ্যমে।

গঙ্গার জলতল থেকে প্রায় ১৩ মিটার গভীরে রয়েছে নদীবক্ষ। তারও ১৩ মিটার নীচে তৈরি করা হয়েছে এই মেট্রো টানেল। সুড়ঙ্গের মাথা অর্থাৎ উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের ব্যবধান ৬ মিটার। সবমিলিয়ে গঙ্গাবক্ষ থেকে ১৯ মিটার নীচে পাতা হয়েছে মেট্রোর লাইন।  

২০১৮ সালে মাত্র ৬৬ দিনে এই ৫০০ মিটার পথের কাজ শেষ হয়েছিল। প্রকল্পের এক কর্মর্তার দাবি, গঙ্গাবক্ষের ক্ষয় হিসাব করেই টানেল পাতা হয়েছে। ১২০ বছরেও তা মেট্রো লাইনের ক্ষতি করতে পারবে না। ভূমিকম্প রোধক নানা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এই প্রকল্পে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।