আগরতলা (ত্রিপুরা) : ত্রিপুরার একদম উত্তরের মহকুমা ধর্মনগর। ওই মহকুমার একটি গ্রামের নাম চল্লিশ দ্রোণ।
এ গ্রামের মাটি স্থানীয় মানুষের কাছে পবিত্র।
কারন চল্লিশ দ্রোনের মাটির নিচে ঘুমিয়ে আছেন অনেকে। যারা ঘুমিয়ে আছেন তাদের শৌর্য-বীর্য আজো অমর গাঁথা। তাদের রক্ত ঝরানো বীরত্বের কাহিনী এখনো এই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে। যে কারনে চল্লিশ দ্রোণ মানুষের কাছে তীর্থ ক্ষেত্রের চাইতে কম কিছু নয়।
চল্লিশ দ্রোণ গ্রামটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন কদমতলা ব্লক এলাকায় অবস্থিত। চল্লিশ দ্রোণের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে সমাধিস্থল। সামাধির ওপর রয়েছে নাম ফলক। কিছু কিছু নাম ফলক এখনো বোঝা যায়।
আবার কালের আবর্তে অনেক নাম ফলকের গায়ের লেখা ঝাপসা হয়ে গেছে। এ সব নাম ফলক বলছে বীরদের কথা। যারা নিঃস্বার্থভাবে নিজের বুকের রক্ত ঢেলেছিলেন নিজের দেশকে স্বাধীন করতে।
চল্লিশ দ্রোণ এলাকা ছাড়াও অসংখ্য নাম গোত্র হীন কবর বা সমাধি রয়েছে সারা ত্রিপুরা জুড়ে। যারা বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে নিজের প্রান উৎসর্গ করেছিলেন দেশ মাতার স্বধীনতার জন্য।
তাদের হয়তো সবার নাম ঠিকানা আজ জানার উপায় নেই। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই। কিন্তু তাদের একটাই পরিচয় তারা বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী। আর “বীরের” তো অন্য কোন পরিচয়ের প্রয়োজনও হয় না। শৌর্য এবং বীরত্বই তার সব পরিচয়।
ধর্মনগরের চল্লিশ দ্রোণ এলাকায় ছিল আট নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ক্যাম্প। এ কথা জানাচ্ছিলেন আব্দুল নূর। তার বয়স এখন প্রায় ৮০। তার মনে এখনো তাজা ৭১”র সেই স্মৃতি।
জানালেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি যুবক। বাবা উস্তার আলি। তিনি উৎসাহ দিতেন মুক্তিজেদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য। তার উতসাহেই মুক্তি যোদ্ধাদের ক্যাম্পে আমি খাবার পৌঁছে দিতাম। ”
আব্দুল নূর জানিয়েছেন, “এ ক্যাম্পের জায়গাতেই আছে লেফটেন্যান্ট ইমদাদুল হকের সমাধি। ক্যাম্পে খাবার নিয়ে গেলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। জিজ্ঞাসা করতেন কোন ক্লাশে পড়ি? কি পড়ি? আরও অনেক প্রশ্ন করতেন তিনি।
খবর নিতেন বাড়ির লোকজনদের সম্পর্কেও। ইমাদাদুল হক বলতেন বাড়িতে তার আমার মতো একটি ছেলে রেয়েছে। ”
এলাকার শিক্ষক আব্দুল ছাবুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স বারো। জানিয়েছেন, “ ৭১’র যুদ্ধে এই এলাকায় পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়। গুলিতে বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সেনা শহীদ হন। লেফটেন্যান্ট ইমদাদুল হকসহ অন্য সেনারা তার মৃত দেহ আনতে যান।
মৃতদেহ নিয়ে ফিরে আসার সময় পাক বাহিনী পেছন থেকে গুলি চালায়। এতে লেফটেন্যান্ট ইমদাদুল হক এবং অন্য দু’জন সেনার মৃত্যু ঘটে। অনেক পরে রেজিমেন্টের বাকি মুক্তি যোদ্ধারা তাদের মৃতদেহ আনে ক্যাম্পে। ক্যাম্পের পাশেই সহযোদ্ধাদের সমাধিস্থ করে তারা। চোখের জলে বিদায় দেন শহীদদের। ”
সমাধিতে তারিখ লেখা আছে ১৯৭১। ১২ অক্টোবর। গ্রামের মানুষ আজো শ্রদ্ধাভরে দেখেন এই সমাধিগুলো। তাদের কাছে এ সমাধি পবিত্র। কারন তারা প্রাণ দিয়েছিলেন দেশ মাতৃকার জন্য।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৯ ঘন্টা, জুন ১১, ২০১২
টিসি, সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর
kumar.sarkerbd@gmail.com