কলকাতা: মুম্বাই হামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত আবু হামজাকে সৌদি আরবে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার কলকাতার বাংলা সংবাদ টিভি চ্যানেল এবিপি আনন্দ তার গ্রেফতার বিষয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
চ্যানেলটি বলেছে, গত ৯ মে ২০০৬ মুম্বইয়ের বিধায়ক হোস্টেলে ছিলেন আবু হামজা। পরে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। প্রশ্ন উঠছে, কোন সূত্র ধরে মুম্বাইয়ের এমএলএ হোস্টেলে জায়গা পেয়েছিল লস্কর-ই-তৈয়বার জঙ্গি হামজা?
চ্যানেলটি দাবি করেছে, গত ২১ জুন সৌদি আরব থেকে ভারতে আনা হয় হামজাকে। তাকে চিহ্নিত করার জন্য তার ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়েছিল। তার কাছে রয়েছে পাকিস্তানের পাসপোর্ট।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সৌদির ওপর হামজাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও খবর। তবে ডিএনএ পরীক্ষা করার পর তার পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ভারতের হাতেই তুলে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি প্রশাসন।
দিল্লি পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, সৌদি আরব থেকে আসার পথে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারিভাবেও বলা হচ্ছে, গত ২১ জুন সৌদি আরব থেকে বিমানে দিল্লি পৌঁছনোর পরেই তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে ইন্টারপোল সাহায্য করেছে। গোয়েন্দাদের জেরার মুখে মুম্বই হামলায় তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে হামজা।
মুম্বই হামলায় পাকিস্তানি যোগের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলতে ভারতের হাতে এত দিন ছিল ওই ঘটনায় ধৃত একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কাসাব। এবার তার সঙ্গে যোগ হলো আবু হামজা। বস্তুত গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, কাসাবের থেকেও আবু হামজার গ্রেফতার পাক যোগের অনেক বেশি বড় প্রমাণ।
তবে এতেও পাকিস্তানের ওপরে কতখানি চাপ তৈরি করা যাবে, তা নিয়ে অন্ধকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তারা।
পাক সূত্র উল্লেখ করে চ্যানেলটি বলেছে, ইসলামাবাদের তরফে এখনও ভারতের কাছ থেকে ‘উপযুক্ত প্রমাণ’ চাওয়া হচ্ছে! গোয়েন্দা সূত্রের খবর, হামজার কণ্ঠস্বরের নমুনা চেয়ে এবার পাকিস্তানের উপরে চাপ আরও বাড়াবে দিল্লি।
কাসাবকে জেরা করেই জানা যায়, হামলার প্রস্তুতির সময় জঙ্গিদের হিন্দিতে কথা বলতে শিখিয়েছিল হামজা। জাকিউর রহমান লকভি ও হামজা করাচির বন্দর থেকে কাসাবদের মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা করিয়ে দিয়েছিল।
হামলা চলাকালীন করাচির কন্ট্রোল রুমে বসে জাকিউর রহমান লকভি, মেজর সামির আলি, মেজর ইকবাল ও মুজাম্মিল ভাটের পাশাপাশি হামজাও জঙ্গিদের সঙ্গে সবসময়ে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু তদন্তের প্রথম দিকে বোঝাই যায়নি, এই হামজা আদতে ভারতীয়। জঙ্গিদের সঙ্গে হামজার কথোপকথনের টেপ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়েই গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয় মুম্বাই হামলার পিছনে ‘ভারতীয় যোগ’ নিয়ে।
আদতে মহারাষ্ট্রের বিড় জেলার বাসিন্দা হামজা সেখানকার ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেছেন। ২০০২ সালে গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার পরে নিষিদ্ধ মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন সিমিতে যোগ দেন তিনি। সিমির মাধ্যমেই লস্করের সংস্পর্শে আসেন হামজা।
হামজাকে ধরতে তার বিরুদ্ধে ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারি করে ইন্টারপোল। মুম্বই হামলার পরে কিছু দিন পাকিস্তানে ছিল হামজা। তারপরে সৌদি আরবে চলে যায় সে। জামা মসজিদ বিস্ফোরণে আটক এক জঙ্গিই প্রথম সৌদি আরবে হামজার উপস্থিতির কথা জানায়। তখন থেকেই তার ওপর নজরদারি শুরু করেন গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর