ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

তারকাদের মিলনমেলায় শুরু কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
তারকাদের মিলনমেলায় শুরু কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

কলকাতা: শহরে বিনোদন জগতের চাঁদের হাট। পর্দা উঠল ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের।

 

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে উৎসবের সূচনা করলেন বলি-টলির এক ঝাঁক তারকা। সেখানে সালমান খানকে ভাইফোটা এবং রাখির আমন্ত্রণ জানালেন মমতা। তুলে দিলেন তার নিজের হাতে আঁকা ছবি। বললেন, বাংলায় প্রতিভার ভাণ্ডার আছে, নিরাপত্তা আছে, কাজের সুযোগ আছে। এখানে এসে সিনেমা বানান। সালমান বলে গেলেন, আমার হিংসে হয়, দিদি আমার থেকেও ছোট রুমে থাকেন।

এদিন বিকেল থেকেই স্টেডিয়ামে একে একে তারকারা এসে উপস্থিত হতে থাকেন। কে নেই সেখানে। অনিল কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহা, সালমান খান, সোনাক্ষী সিনহা, মহেশ ভাটসহ বাংলার ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একইভাবে টলি তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, অঞ্জন দত্ত, পরিচালক তথা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপারসন রাজ চক্রবর্তী।

অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা, রুক্মিনি, শ্রাবন্তী, কোয়েল, ঋতুপর্ণা, নুসরত, মিমিসহ একঝাঁক অভিনেত্রী। এ ছাড়া রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, চিরঞ্জীত চক্রবর্তী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়সহ ছোট পর্দার তারকারা ছাড়াও সঙ্গীতশিল্পী রূপম, ইমন, ইন্দ্রনীল সেনসহ সবাই।

চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্যের মাঝেই তিনি বলেন, আমরা সব দেশের সিনেমা পছন্দ করি। ফিল্মের ভাষা সার্বজনীন এবং সার্বকালীন। বাংলা ভারতের সংস্কৃতির রাজধানী। বাংলা সবাইকে নিয়ে চলতে পছন্দ করে। যে কারণে আমরা বলি উই লাভ ইন্ডিয়া, উই লাভ বেঙ্গল, উই লাভ মাদারল্যান্ড। আমরা সব ধর্ম, সব জাতি সবাইকে নিয়ে চলতে পছন্দ করি। যে কেউ আসুক আমাদের মধ্যে বিভেদ করতে পারবে না। কেউ আমাদের ভাগ করতে পারবে না। বাংলা সবাইকে নিয়ে চলতে ভালোবাসে। কারণ বাংলা মনুষ্যত্বে বিশ্বাসী।

মমতা আফসোস করে বলেন, এবারে অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানকে মিস করছি। অবশ্য উনার আমাকে ম্যাসেজ করে জানিয়েছেন না আসার কারণ। অমিতাভ জি অসুস্থ এবং শাহরুখ খান মেয়ের সিনেমার প্রোমোশন নিয়ে ব্যস্ত।

মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত বলি তারকা ও পরিচালকের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলা কখনও টলিউড আর বলিউড আলাদা করে না। এই বাংলা বলিউডকে প্রচুর স্টার দিয়েছে। বাংলার মানুষের ট্যালেন্ট রয়েছে। বাংলার মানুষের প্রচুর ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে। আমি জানি আপনারা বাংলাকে পছন্দ করেন। তাই বাংলায় এসে শুটিং করুন। বাংলার যে কোনো প্রান্তে আপনারা কাজ করতে পারেন। এখানে অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলায় সেফটি, সিকিউরিটি আছে। বাংলার মতো অতিথি পরায়ণ কোথাও পাবেন না। বাংলায় সব ধরনের রসদ আছে। দার্জিলিং থেকে সুন্দরবন।

সালমানের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ভাইজান আমরা যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি আবার দেখা হবে। আপনি আসবেন তো। সালমান মাথা নেড়ে সম্মতি দেন, হ্যাঁ। আপনি আসবেন, আমি ভাইফোঁটা দেব, রাখি পরাবো। সবশেষে নিজের হাতে আঁকা ছবি তুলে দেন সালমান খানকে। বলেন, এটা আমার ভাইয়ের জন্য। পরে অনিল কাপুর এবং শত্রুঘ্ন সিনহা এবং মহেশ ভাটকে আমি পাঠিয়ে দেব।

অপরদিকে সালমান বলেন, গতবার দিদির অনুরোধে আজ এখানে এলাম। এরপরই সালমান তার স্বভাব ভঙ্গি ডায়লগে বলেন, একবার আমি কাউকে কথা দিলে তারপর আমি আর নিজের কথাও শুনি না। শেষবার, গত ১৩ মে ইস্টবেঙ্গল মাঠে কনসার্ট করতে শহরে এসেছিলেন সালমান। তখন মমতার বাসভবনেও গিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, আগেরবার কলকাতায় এসে মমতা দিদির বাড়িতে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি অনেক শুনেছি। শুধু দেখতে চেয়েছিলাম যে, দিদি ছোট বাড়িতে থাকেন কিনা। কিন্তু, গিয়ে দেখলাম সত্যিই তাই।

মূলত, তার ফ্যানেরা জানেন, সুপারস্টার হওয়া সত্ত্বেও মুম্বাইয়ের বান্দ্রার গ্যালাক্সি আবাসনের এক কামরার রুমের মধ্যেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন সালমান। অভিনেতা হাসতে হাসতে বললেন, দিদিকে দেখে সত্যিই হিংসে হয়। কারণ দেখলাম, তিনি সত্যিই আমার থেকেও ছোট একটা বাড়িতে থাকেন। এরই সঙ্গে ভাইজান তার নিজের বাড়ির বর্ণনা দেন। এছাড়া তার মুখে বাংলায় দুটে সংলাপ শোনা গেল। কলকাতা কেমন আছ এবং আমি তোমাকে ভালোবাসি।

সবমিলিয়ে এদিন থেকে শহরে শুরু হয়ে গেল ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ১২ ডিসেম্বর অবধি। এবারের উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি স্পেন। স্পেশাল ফোকাস কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। আট দিনের চলচ্চিত্র উৎসবে ৩৯টি দেশের মোট ২১৯টি সিনেমা দেখানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ১৬৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি এবং ৫০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ও তথ্যচিত্র। মোট বিদেশি সিনেমার সংখ্যা ৬৩টি।

এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের একটি ছবি প্রদর্শিত হবে। পরিচালক সৈয়দা নিগার বানু 'নোনা পানি' ছবিটি এশিয়ান সিলেক্ট বিভাগে স্থান পেয়েছে। উৎসবের সিনেমা দেখানো হবে নন্দন ১,২,৩ সিনেমা হলে; শিশির মঞ্চ, নজরুল তীর্থ-১,২; রবীন্দ্রসদন, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, সাউথ সিটি মল ও কোয়েস্ট মল সিনেপ্লেক্স, মিনার, বিজলী, মেনকা, অশোকা, স্টার, প্রিয়া, নবীনা সিনেমা হলসহ কলকাতার ২৩টি পেক্ষাগৃহে।

এদিন নেতাজী ইনডোরে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হবে উত্তম কুমার তনুজা অভিনীত দেয়া নেয়া। এবারে মোট পাঁচটি আলাদা প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ রয়েছে। এগুলি হলো -ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন (ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজ), কম্পিটিশন অল ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ, এশিয়ান সিলেট (নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড), বেঙ্গলি প্যানোরামা, ন্যাশনাল কম্পিটিশন অন ডকুমেন্টারি এবং ন্যাশনাল কম্পিটিশন অন শর্ট ফিকশন। এছাড়াও নন-কম্পিটিশন বিভাগে থাকছে সিনেমা ইন্টারন্যাশনাল।

বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২৩
ভিএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।