ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতায় স্মরণসভা

‘হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা সাহিত্যিক হুমায়ূন’

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১২
‘হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা সাহিত্যিক হুমায়ূন’

কলকাতা: বাংলা সাহিত্যের নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে কলকাতা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের আয়োজনের তার স্মৃতিচারণ করা হয়।



বিকাল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় তার স্মৃতিচারণ করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও শঙ্কর(মনিশঙ্কর মুখার্জি)।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি সমরেশ মজুমদার।

হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারণ করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি খুব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। এ রকম একজন ক্ষণজন্মা সাহিত্যিকের স্মৃতিচারণ করতে আমি শোকার্ত। তার সঙ্গে আমার দুই-তিনবার যোগাযোগ হয়েছে। শেষবার নিউইর্য়কে দেখা হওয়ার কথা থাকলেও বিমান ধরার তাড়া থাকার কারণে তা আর হয়নি। তখনই শুনেছিলাম, তিনি অসুস্থ। এ না দেখা হওয়ার আক্ষেপ আমার সারাজীবন থাকবে। ’’

তিনি বলেন, ‘‘হুমায়ূন একজন রুচিবান লেখক, ভালোবাসায় সিক্ত মানুষ। তার লেখা পড়া শুরু করলে যেন শেষ হতে চায় না। সম্মোহনে জড়িয়ে ফেলে। তার আত্মার মৃত্যু হয়েছে, হুমায়ূনের মৃত্যু হয়নি। একজন রসায়নের ডক্টরেটের মধ্যে এতো সাহিত্যরস এলো কি করে তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। ’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘কল্পবিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয় করেছেন। তার শেষকৃত্যে জনসমাগম দেখে আমি উদ্বেলিত। এদেশের (ভারতের) কোনো সাহিত্যিকের মৃত্যুতে এ ধরনের জনসমাগম ঘটবে না, তা আমি নিশ্চিত। ’’

শঙ্কর বলেন, ‘‘তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু তার বেশ কয়েকটি লেখা আমি পড়েছি। লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, তিনি বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তার জীবদ্দশায় তিনি রবীন্দ্র, নজরুল, বঙ্কিম, শরৎচন্দ্রের পাশে স্থান করে নিয়েছিলেন। আমার দুঃখ হচ্ছে, বয়সে ছোট হুমায়ূনের স্মৃতিচারণ করতে হচ্ছে। ’’

সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিনি শুধু সাহিত্যিক নন, সব্যসাচী লেখক। কবিতা ছাড়া সাহিত্যের সব শাখায় ছিল তার অবাধ বিচরণ। তার লেখা `নন্দিত নরকে` বইটি নিয়ে আমি দেশ পত্রিকায় সমালোচনা লিখেছিলাম। পরে পরিচয় হওয়ার পরে তিনি আমায় সেই লেখাটি দেখিয়ে বলেছিলেন, এটা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। ’’

তিনি বলেন, ‘‘শরৎচন্দ্রের পর হুমায়ূনের জনপ্রিয়তায় দুই বাংলার সাহিত্যিকরা ভুরু কোঁচকাবেন। তার বই বের হলে একবারে ২৫ হাজার কপি নিমেষে শেষ হতো। এ জনপ্রিয়তার কারণ, রিকশাচালক থেকে উচ্চপদের আমলা সবার হেঁসেলে প্রবেশ করার ক্ষমতা ছিল তার। ’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘কলকাতায় তিনি জনপ্রিয়তা পাননি কেন? তার কারণ আছে। মনে রাখতে হবে, তিনি একমাত্র বাংলা ভাষার সাহিত্যিক যার লেখা টানা ৮ বার দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আমারও নয়। কিছু সংখ্যক খারাপ মানুষ এদেশের যারা তার এ সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশের সম্পাদককে গিয়ে বলেন, `এটা কেন হচ্ছে? এরপর দেশ কর্তৃপক্ষ হুমায়ূনকে বলেন, আনন্দবাজারের অন্যান্য পত্রিকায় লিখতে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। খুবই জেদী ও একরোখা ছিলেন। তাই কলকাতাবাসী তার সাহিত্যরস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ’’

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।