কলকাতা: পলাশীর যুদ্ধেই অস্তমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতা, আর সেই যুদ্ধেই শেষ হয়েছিল বাংলার নবাবি সাম্রাজ্য। তাতে কি? রাজ্যপাট না থাকলেও পবিত্র রমজান মাসে আজও নিয়ম মাফিক নবাবি ইফতারের আয়োজন করা হয় মুশির্দাবাদের লালবাগের চকশাহী মসজিদে।
আর রমজান মাসে ইফতারের এই মাসব্যাপী আয়োজন করেন বাংলার নবাব বংশের ‘ছোটে নবাব’ সৈয়দ রেজা আলি মির্জা।
মঙ্গলবার ইফতারের আয়োজন তদারকি করতে করতে তিনি বলেন, ‘‘বংশের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা জানতে পেরেছি, তার পরতে পরতে নবাবিয়ানা। মুর্শিদকুলি খাঁ, আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদৌল্লার কথা বাদ দিলে আমার বাবার আমলেও ইফতার মানে এক বিশাল আয়োজন। আমার দাদার আমল পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালের পর আমাদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। ’’
ছোটে নবাব ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘জমির রাজস্ব কর বাবদ আগে যা পেতাম, তা এখন ১ কোটি রুপি থেকে শূণ্যতে দাঁড়িয়েছে। আমরাও নবাব থেকে ফকির হয়ে গেছি। তাই আগের ইফতারে ঐতিহ্যটাই আছে, নবাবীয়না নেই। ’’
সুবা বাংলার ইতিহাস থেকে জানা গেছে, তৎকালীন নবাবরা হাজার দুয়ারি প্যালেস থেকে বিশাল ঘোড়সওয়ারের শোভাযাত্রা করে রমজান মাসের প্রতি দিন চকশাহী মসজিদে গিয়ে মোনাজাত করে আরব থেকে আনা শাহী খেজুর ও শরবত দিয়ে রোজা ভঙ্গ করতেন। ওই নবাবি ইফতারে জড়ো হতেন কয়েক হাজার মানুষ। দিল্লির সম্রাটরাও এ ইফতারে অংশ নিতেন।
কি ছিল ইফতারের আয়োজনে? জানা গেছে, বিরিয়ানিকে প্রধান আইটেম ধরে মোট ১০টি আইটেম পরিবেশন করা হতো। থাকতো কচি পাঁঠার মাসের রেজালা থেকে মুরগির মাংস পর্যন্ত। ঘিয়ের হালুয়া থেকে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি। এর মধ্যে দিল্লির সম্রাটদের পাঠানো মিষ্টি পরিবেশন করা হতো। ফল থাকতো ১০ রকমের। এর মধ্যে আবার মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত আম থাকতো ১০ প্রজাতির।
আক্ষেপ করে ছোট নবাব বলেন, ‘‘এখন আর সেই পরিবেশ নেই। কষ্ট করেও প্রতিদিন দুশ’ মানুষের আয়োজন করি প্রতিদিন। তাতেই আমার অবস্থা খারাপ। কি করবো, নবাবি ঐতিহ্য। ’’
আর ইফতার? না কচি পাঁঠা আর হয় না, ১০টি আইটেমও করা যায় না। তবে আম থাকে, টাটকা না পেলে হিমঘর থেকে আনিয়ে নেওয়া। ঐতিহ্য যে বড় দায়! তাই আজও নবাবি ইফতারের আয়োজন করা হয়, অতীতের ইতিহাসকে স্মরণ করার লক্ষ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর