নয়াদিল্লি: ভারতের বিচার বিভাগের নামে ঘুষের বদনাম দিয়ে আখেরে নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তিতে ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, “আদালতে টাকার বিনিময়ে রায় কেনা যায়।
মমতার অভিযোগকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক বিচারপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে।
সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীণ পারেখ বুধবার কোনো রাখঢাক না রেখেই জানিয়েছেন, বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মমতার বিরুদ্ধে মামলার কথা এখনও ভাবা না হলেও তার কাছে খবর আছে, ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হয় সুপ্রিম কোর্ট না হয় কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের হতে চলেছে। অর্থাৎ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে চলেছেন মমতা।
মঙ্গলবার বিধানসভায় একটি সেমিনারে মুখ্যমন্ত্রী মিডিয়া, নাগরিক সমাজ, নাগরিক অধিকার রক্ষায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘আজকাল এরা সবাই জ্ঞান দিচ্ছে। রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সমালোচনার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে। নিজেরা রাজনীতি করবে না, কিন্তু জ্ঞান দিয়ে সব কিছু নির্ধারণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচিত রাজনীতিকদের কাজ করতে না দিয়ে হয়রানি করার মারাত্মক চেষ্টা চলছে। এমনকি আদালতেও টাকার বিনিময়ে রায় কেনা যায়। বিচার বিভাগের একাংশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ’
সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীণ পারেখ আরও বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী সমগ্র বিচার বিভাগকে কলুষিত করতে চেয়েছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য একেবারেই বেমানান। তার ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ জানানোর যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। ”
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ নিজের শরিক দলের নেত্রীকে আড়াল করার চেষ্টা করে বলেছেন, “মমতা ব্যানার্জি কিসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ধরনের মন্তব্য করেছেন তা তার জানা নেই। তবে একথা ঠিক যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা দরকার। ”
কেন্দ্রের শরিক দলের নেত্রীর বিরুদ্ধে সলমন খুরশিদ প্রকাশ্যে সমালোচনা না করলেও সিপিএম, বিজেপি সরাসরি সমালোচনা করেছে।
সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম নয়াদিল্লিতে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি সবাইকেই ‘ফায়ারিং লাইন’- এ দাঁড় করাতে চাইছেন, যাতে সকলেই তার চাপের কাছে নতি স্বীকার করে। মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে চাপে রাখারই কৌশল নিয়েছেন। ”
বিজেপি নেতা বলবীর সিং পুঞ্জ বলেছেন, “একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনি এমন অভিযোগ তুলেছেন, যা প্রমাণিত নয়। যা প্রমাণ হয়নি, তা অবান্তর। একজন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথা কখনই মানায় না। ”
বিশিষ্ট আইনজীবী সোলি সোরাবজী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ে থেকে শুরু করে হরিশ সালভে, পিপি রাও সকলেই মমতার বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
সোলি সোরাবজী পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেছেন, “কোনো কোনো মামলায় তো মমতা ব্যানার্জির পক্ষেও গেছে আদালতের রায়। সেক্ষেত্রে বিচারপতিকে কে টাকা দিয়েছিল? খোদ মমতা ব্যানার্জি কি টাকা জুগিয়েছিলেন বিচারপতিকে? এরকম হাস্যকর অযৌক্তিক অভিযোগের অর্থ কী? আমরা একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে পরিণত মন্তব্য আশা করি। ব্যক্তিগতভাবে ওই মন্তব্যে আমি ব্যথিত। ”
সন্তোষ হেগড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অবিবেচক, অদূরদর্শী বলে অভিহিত করেছেন।
হরিষ সালভি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “ভারতীয় গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর যদি এভাবে সপ্তমে ওঠে, তাহলে আমার মনে হয় ভারতীয় সংবিধানের সামনে সমূহ বিপদ। ”
পিপি রাওয়ের কথায়, ``কোনো মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের মন্তব্য আশা করা যায় না। ``
কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “এরপর রাজ্য চালাবে কে? মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার জন্য তো তার জেল হওয়া উচিত। তখন রাজ্যের হাল ধরবে কে?”
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com