ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

একের পর এক মামলায় জেরবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১২

কলকাতা: আদালত অবমাননা থেকে শুরু করে একের পর এক মামলায় নাকাল অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের। সবশেষ, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় প্রশ্নকারী শিলাদিত্য চৌধুরীর গ্রেফতারির ঘটনায় ফের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে রাজ্য সরকার।



গত শুক্রবার এ ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের এডিজিকেই তদন্ত করে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এদিনই রাজ্য বিজেপির তরফে দায়ের করা এক অভিযোগের ভিত্তিতে এ নির্দেশ দেয় মানবাধিকার কমিশন।

কমিশন প্রাথমিকভাবে মনে করছে, এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগগুলো উঠেছে তার বাস্তবতা যাচাইয়ের অবকাশ রয়েছে। সে কারণেই কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত ৮ আগস্টে বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীন মঞ্চের সামনে গিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করেন শিলাদিত্য চৌধুরী। এর পরেই তাকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে মাওবাদী সন্দেহে জেরা করে পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ১১ আগস্ট শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম মহকুমা আদালতে পেশ করে বেলপাহাড়ি থানা পুলিশ।

আদালত তাকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশকে মারধর, নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়া, আবার নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে বহু লোক থাকার সুযোগে শিলাদিত্য চৌধুরী পালিয়ে গেছেন বলে আদালতে লিখিতভাবে জানায় পুলিশ।

রাজ্য বিজেপি এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি শিলাদিত্য চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছবি বলছে, সেদিন তিনি  নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরেই ছিলেন। বরং মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারাই শিলাদিত্যকে নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতর দিয়ে মঞ্চের পেছনে নিয়ে যায়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ছেড়েও দেয় পুলিশ। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিলাদিত্যের আইনজীবী।

অপরদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়ে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে। গত বৃহস্পতিবার এ পিটিশন দাখিল করেন জম্মু-কাশ্মীর প্যান্থার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রবীণ আইনজীবী ভীম সিং।

সংবিধানের ১২৯ ধারা উল্লেখ করে পিটিশনে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্য ‘সামগ্রিকভাবে ভারতীয় বিচারব্যবস্থা কর্তৃত্বকে খাটো করার পাশাপাশি কালিমালিপ্ত করেছে। ’ সেই সঙ্গে পিটিশনে সুপ্রিমকোর্টের পূর্বের কিছু রায়ের উল্লেখ করা হয়েছে।

ভীম সিংয়ের অভিযোগ, মমতার মন্তব্য ভারতীয় বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আস্থা কমানোর ক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী প্রভাব ফেলবে। কারণ, তার মন্তব্য ভারতের বিচার ব্যবস্থার দায়বদ্ধতা, মর্যাদা এবং কর্তৃত্বকে খর্ব করতে চেয়েছে।  

তিনি তার আইনজীবী ভিকে গর্গের মাধ্যমে পিটিশন দাখিল করে জানিয়েছেন, মমতা সেদিন বিধানসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে কী বলেছিলেন বা মন্তব্য করেছিলেন তার পুরো রেকর্ডিং যেন আদালতে জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিমকোর্ট।

এদিকে, মমতার মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়ন। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, মমতার ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, তিনি সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ফলে, নিজে সংবিধান অনুসারে প্রশাসনিক প্রধান হয়ে সংবিধানের আর একটি স্তম্ভ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করতে পারেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ ‘ফ্যাসিস্টধর্মী’ কথাবার্তা আগামী দিনে রায় দান, সংবিধান এবং সর্বোপরি দেশকে দুর্বল করবে।

এ কারণে ওই মন্তব্যের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে লইয়ার্স ইউনিয়ন।

‘টাকা দিয়ে বিচার কেনা যায়’ সম্প্রতি দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।