ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতের পরমাণু কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন

নয়াদিল্লি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১২

নয়াদিল্লি: জাপানের ফুকুশিমায় গত বছর ভয়াবহ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনার পরও কোনো শিক্ষা নেয়নি ভারত। দেশের পরমাণু কেন্দ্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে রয়েছে চরম গাফিলতি।

ওই দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ডের অবস্থা অনেকটা ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারে’র মতোই। বোর্ডের গত চার বছরের কাজকর্ম পর্যালোচনার পর এভাবে রায় দিয়েছে কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া (সিএজি)।

গত বুধবারই ভারতীয় সংসদে এই রিপোর্ট পেশ হয়েছে। সিএজি জানিয়েছে, ১৯৬২ সালে পরমাণু শক্তি আইন অনুযায়ী পরমাণু কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণে ১৯৮৩ সালে তৈরি হয় বোর্ড। কিন্তু বোর্ড না শক্তিশালী, না স্বাধীন। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনো নিয়ম-কানুন জারির ক্ষমতাটুকুও বোর্ডের নেই। দূষণ হলে তাতে দায়ী যারা তাদের বড় সাজা দেওয়ার ক্ষমতা বোর্ডের নেই। মাত্র ৫০০ রুপি জরিমানার যে ব্যবস্থা আছে তাতে পরমাণু দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করা সম্ভব নয়।

সিএজি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে কড়া আইনি ব্যবস্থা রয়েছে তার উদাহরণ উল্লেখ করে জানিয়েছে, ভারতের এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো কঠোর করা প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এ প্রসঙ্গে সিপিএম পলিট ব্যুরো সদস্য ও সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি পরমাণু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কড়া সুরক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের পার্টি বরাবরই পরমাণু কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার পক্ষে। এই প্রশ্নে সরকারের যথাযথ ভূমিকা পালন জরুরি। ”

পরমাণু দূষণ বা তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের ঘটনা দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য ঘটে চলেছে তার উদাহরণ দিয়েছে সিএজি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের ৪৩৬টি শিল্প ইউনিট যেখানে খুব বেশি পরিমাণে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ হয়ে থাকে সেগুলি সমীক্ষা করে দেখা এর মধ্যে ৩২৬টি ইউনিটের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। ৫২ হাজার ১৭৩টি মেডিক্যাল এক্স-রে ইউনিটে দেখা গেছে কোনো বৈধ নথিভুক্তিকরণ নেই। ১৩৫টি গামা চেম্বার ইউনিটের ৭০টি চলছে বৈধ অনুমতি না নিয়েই। এভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে তেজ‍‌ষ্ক্রিয় বিকিরণ ঘটছে তা বিপুলভাবে পরিবেশ দূষিত করছে। প্রাণী জগতের ক্ষতি হচ্ছে।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে চলছে এই বিষয়ে নজরদারিতে চরম গাফিলতি। রিপোর্টে উল্লেখ, পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়টি ২০০২ সালে একটি নির্দেশিকা তৈরি হয়। এতে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণাগারে নিয়মিত নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিদির্শন না হওয়ায় পরমাণু কেন্দ্রের দূষণে সংস্থার কর্মী ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে বলে মন্তব্য সিএজি-র।

যথেষ্ট নজরদারির অভাবে দিল্লির মায়াপুরীতে বাতিল পুরানো জিনিসপত্রের দোকানে কিভাবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের পদার্থ চলে এসেছিল তা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৯ সালে কেনা গামা সেল বিক্রি করা হয় পুরানো জিনিসপত্রের দোকানে। সেখানে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দোকানি। এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে নির্দিষ্ট নজরদারির অভাবে।

দেশের পরমাণু, তেজস্ক্রিয় বিকিরণে দূষণ রুখতে নির্দিষ্ট সুপারিশ জানিয়েছে সিএজি। বলা হয়েছে, তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ হয়ে থাকে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবস্থা কঠোর করা দরকার। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাড়াতে হবে নজরদারি। পর্যবেক্ষকের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানায় সিএজি।

সুপারিশে বলা হয়েছে, রেডিয়েশন নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করা সবার আগে প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ নিয়ে নীতি গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।