ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পরলোকে প্রাক্তনমন্ত্রী তপন শিকদার

আউটপুট এডিটর, কো-অর্ডিনেশন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৪
পরলোকে প্রাক্তনমন্ত্রী তপন শিকদার তপন শিকদার

ঢাকা: শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশেই চলে গেলেন এক সময় মাগুরা জেলার বাসিন্দ‍া প্রবীণ বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তপন শিকদার (৭০)৷ দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি৷ তপন শিকদার সোমবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে পরলোক গমন করেন। তাঁর হাত ধরেই এই রাজ্যে উত্থান হয়েছিল বিজেপির৷ 

 

তাঁর মৃত্যুতে এদিন ট্যুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ মোদী ট্যুইটে লিখেছেন,"দল গঠনে অবদান এবং মানবসেবায় একনিষ্ঠতার জন্য তপন শিকদারকে মনে রাখবে মানুষ৷ তাঁর মৃত্যু খুবই দুঃখের৷ আমি শোকাহত৷ তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি৷" 

 

এদিন দুপুরে এইমস থেকে তপনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির অশোক রোডে দলীয় সদর দফতরে৷ সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানান নরেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী মোদী, রাজনাথ সিং, লালকৃষ্ণ আদবানি-সহ দলের শীর্ষনেতারা৷ 

 

১৯৪৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মাগুরা জেলার মুহম্মদপুর উপজেলার বসুর ধূলবাড়ি গ্রামে জন্ম তপন শিকদারের৷ বাবা ধীরেন্দ্রনাথ শিকদার জমিদার সত্বেও ছিলেন চিকিৎসক৷ মা বেলারানি শিকদার৷ তপনরা ছিলেন পাঁচ ভাই ও ছয় বোন৷ ১৯৪৭ সালে ধীরেন্দ্রনাথ স্ত্রী-পুত্রকন্যাসহ চলে যান ভারতের মালদহের বুলবুলচণ্ডীতে৷ এখানে ছাত্রাবস্থাতেই তপন শিকদারের রাজনীতিতে হাতেখড়ি৷ ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত মালদহ কলেজে বিদ্যার্থী পরিষদ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ 

 

১৯৬৮ সালে উচচশিক্ষার জন্য কলকাতায় চলে যান৷ পা রাখেন তত্কালীন জনসঙ্ঘের রাজ্য কার্যালয়ে৷ পরের বছরই জলঙ্গির বিধায়ক জনসঙঘ নেতা প্রফুল্ল সরকারের ব্যক্তিগত সহায়ক নির্বাচিত হন সদালাপী, সদাহাস্যময় তপন৷ 

 

১৯৭১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে প্রবেশ৷ তখন থেকেই দলীয় কাজে রাজ্যের বিভিন্ন্ প্রান্তে ছুটে বেড়ানো শুরু৷ ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সময় দলের নির্দেশে আত্মগোপন করে সত্যাগ্রহ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে৷ ১৯৭৭ সালে বিধানসভা ভোটে প্রথমবার প্রার্থী হন বিদ্যাসাগর কেন্দ্রে জনতা পার্টির টিকিটে৷ 

 

সিপিএমের সমর রুদ্রর কাছে সেবার হেরে যান তপনবাবু৷ ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠালগ্নে দলের রাজ্য সম্পাদকের পদে নির্বাচিত হন তিনি৷ ২০১৪ পর্যন্ত তিন দফায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও দু'দফায় রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৯৫ সালে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক হিসাবে মনোনীত হন৷ 

 

সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ  দমদম কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে জিতে৷ সংসদ সদস্য হয়েছেন পরপর দুবার৷ প্রথমবার ১৯৯৮ সালে৷ দ্বিতীয়বার ১৯৯৯-তে৷ দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর. অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রথম এনডিএ সরকারে টেলিকম প্রতিমন্ত্রী হিসাবে যোগদান৷ গোড়া থেকে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং তার পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সার ও রসায়ন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার সামলান তপনবাবু৷ 

 

থাকতেন শ্যামবাজারের কাছে ভূপেন বোস অ্যাভিনিউয়ে৷ সঙঘ পরিবারের আদর্শ মেনে অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন ছিল তাঁর৷ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে তিনি দমদম কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন৷ ভোট মিটে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ ১৮ মে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন৷ সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে৷ 

 

সোমবার দিল্লির সদর দফতরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর বিশেষ বিমানে সন্ধে নাগাদ কলকাতায় নেওয়া হয় তাঁর মরদেহ৷ সেখান থেকে রাহুল সিনহা, শমীক ভট্টাচার্য-সহ অন্যান্য দলীয় নেতারা দেহ নিয়ে যান পিস হাভেনে৷ মঙ্গলবার সকাল সওয়া আটটার সময় পিস হাভেন থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে এণ্টালিতে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘মালদহ সম্মিলনী'-তে৷ 

 

তারপর ন'টা নাগাদ শ্যামবাজারের বাসভবনে৷ সেখানে আত্মীয় পরিজনদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর সকাল দশটায় দেহ নিয়ে যাওয়া হবে বিজেপির রাজ্য দফতরে৷ বেলা এগারোটা পর্যন্ত তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে।

বেলা বারোটায় নিমতলা মহাশ্মশানে তপনবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন্ হবে৷

 

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।