ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা

মান্নান মারুফ ও ইশতিয়াক হুসাইন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৪
গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা থেকে: টিকিট বুকিংয়ের জন্য মোবাইলে কল দিলাম। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বলছি শোনার পর ওপাশ থেকে বললো- রাজারবাগ মূল কাউন্টারে আসতে হবে না।

নর্দা ওভার ব্রিজের ঠিক নিচেই কাউন্টার আছে। ওখান থেকে এখনই টিকেট কেটে নিতে পারবেন।

এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল! এতো চমৎকার সার্ভিস! হাতের কাছেই যেনো স্বর্গের সিঁড়ি পেয়ে গেলাম।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে নর্দা কাউন্টারে গিয়ে বলি, বুকিং দেওয়া আছে। কিন্তু কাউন্টারের সেলসম্যান সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনো বুকিং নেই।

অগত্যা তাদের কথা মেনে নিয়ে ঢাকা থেকে কলকাতার দু’টি টিকিট চাই। কিন্তু এবার দেখা দিলো নতুন ফ্যাঁকড়া। তাদের সব ম্যানুয়াল টিকিট নাকি শেষ হয়ে গেছে। তাহলে উপায়! যেতে হবে সেই রাজারবাগেই।

মন খারাপ করে নর্দ্দার কাউন্টার থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যত হই। এরই মধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে নেমে এলো ঝুম বৃষ্টি।

অগত্যা বিকল্প কাউন্টারের সন্ধান চাই। কিন্তু কাউন্টারের তরুণ সেলসম্যান আমাদের কথা কানেই তুললেন না। বার কয়েক তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। শেষ ভরসা হিসেবে শরনাপন্ন হই ওপাশের কিছুটা বয়স্ক এক ব্যক্তির। তিনি পরামর্শ দেন, গুলশান অথবা উত্তরা যেতে পারেন।   

কিন্তু যাবো কিভাবে? বৃষ্টির পানিতে এরই মধ্যে পথঘাট তলিয়ে গেছে। মোটরসাইকেলে করে দু’জন যেতে হলে ভেজা ছাড়া গতি নেই। কিন্তু এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন চাইছেন, আমরা যেন রাতেই কলকাতার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ি।

এদিকে ডলার এনডোর্স করাতে হবে। টাকা ভাঙিয়ে ডলার করাতে হবে। হাতে সময়ও কম। কাক ভেজা  হয়ে সঙ্গী মারুফ ভাইকে নিয়েই মানি এক্সচেঞ্জে হাজির হলাম।  

এবার টিকেট কেনার পালা। ফের তাই পথে নামি। কাকভেজা হয়ে রওয়ানা হই মিরপুর ১০ নম্বরের উদ্দেশ্যে।

টিকিট কাটলাম। বৃষ্টি ভেজার যন্ত্রণা উবে গেল টিকিট হাতে পেয়ে। মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে গাড়ি ছাড়বে রাজারবাগ থেকে। নিশ্চিন্ত মনে বাসায় ফিরলাম।

কাপড় চোপড় গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতেই অনিশ্চয়তার ফোন মারুফ ভাইয়ের। ৯০৬ নম্বর কোচ যাবে না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। পরে জানা গেল, আমাদের ৯০৮ নম্বর কোচে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আসন এ-৩, এ-৪ থেকে জি-১, জি-২তে চলে গেছে। কারণ জানতে চাইলে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ জানালো, আমাদের ফোনে চেষ্টা করা হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টায় এফ-১, এফ-২ খালি ছিল। আমরা ফোন না ধরায় তা দেওয়া যায়নি।

খুবই ভালো কথা। সব দায়ই যেন আমাদের!

জি সারির আসন পেয়ে বুঝলাম, রাস্তার ঝাঁকি ভালোই টের পেতে হবে আজ। কল্যাণপুর পৌঁছুলাম রাত সাড়ে ১১টায়। সেখানকার সেলসম্যান প্রভাত হাসানের কাছে গাড়ি জটিলতার বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার চেষ্টা করলাম। তিনি জানালেন, ৯০৬ নম্বর কোচের যাত্রা আগেই বাতিল হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ছেলেটি ঠিকমতো শাখা কাউন্টারগুলোকে তা না জানানোতেই এই বিপত্তি।

শেষ পর্যন্ত বাসে উঠলাম রাত ১২টায়। মারুফ ভাই আগেই উঠেছেন। এতক্ষণ তার মন খারাপই ছিল। আমাকে দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলেন মনে হলো। কিন্তু সংশয় রয়েই গেল।

এরপর ভোগান্তি ফেরি ঘাটে। কাউন্টার থেকে বলা হয়েছিল, সকাল ৮টায় বেনাপোল পৌছে যাবো। কিন্তু বিধিবাম। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পার হতেই সকাল ৮টা বেজে গেল। শেষমেষ দুপুরের আগে পৌঁছুলাম বেনাপোল। এবার আরো দুই ঘণ্টার নানা প্রক্রিয়া শেষে ভারতের মাটিতে পা রাখলাম। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম মনে হলো। কিন্তু ব্যাপারটা যে এতো সহজ না তা বুঝতে শুরু করলাম একটু পরই।

গ্রীনলাইনের ভোগান্তি আমাদের পিছু ছাড়বেই না যেনো। বেনাপোল পেরিয়ে পেট্রাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। পৌঁছুতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। গ্রীনলাইনের বাসে ওই পথ পাড়ি দিলাম পাক্কা সাত ঘণ্টায়। যাক, তবুতো পৌছানো গেলো!    

বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৪

** আহমেদাবাদের কাপড় জগতে নয়া মনীষা রাণী!
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...

** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল

** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে

** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব

** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!

** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে

** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।