ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার বইপাড়া কলেজ স্ট্রিট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৫
কলকাতার বইপাড়া কলেজ স্ট্রিট ছবি : সংগৃহীত

কলকাতা: ‘মাইন ডি লিভার’- কলকাতার কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া ঘুরে দেখতে দেখতে এমনই মন্তব্য করেছিলেন সদ্য শেষ হওয়া কলকাতা বই মেলায় আসা এক ফরাসি সাহিত্যপ্রেমী।

ফরাসি ভাষায় ‘মাইন ডি লিভার’-এর বাংলা পরিভাষা করলে দাঁড়ায়- ‘বইয়ের খনি’।

বাস্তবেও তাই। কলকাতার ঠিক  কেন্দ্রে দেড় কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে শুধুই বইয়ের দোকান এই কলেজ স্ট্রিটে।

বিশ্বের অন্যতম পুরনো বই বাজার কলেজ স্ট্রিট। এটি ভারতের এবং এশিয়ার সব থেকে বড় বইয়ের বাজার। এই কারণেই ২০০৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনে ‘বেস্ট অব এশিয়া’ তালিকায় স্থান করে নেয় কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া।

রাস্তার দুই ধারের ফুটপাতে সারি সারি সাজানো বই। বইয়ের ভিড়ে দোকানের কাঠামোই দেখা যায় না। বইয়ের ফাঁকে উঁকি মারে বিক্রেতার মুখ।

এই কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলকে ঘিরে একদিকে যেমন গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশনা শিল্প, অন্যদিকে, দুষ্প্রাপ্য বইয়ের আঁতুড় ঘরও এটি। এই বইয়ের দোকানগুলিতে ঘুরলে হঠাৎ করে হাতে উঠে আসতে পারে প্রাচীন কোনো বই। তবে নতুন বইয়ের দোকানও কম নেই। আছে পাঠ্যবইয়ের বিরাট সম্ভার।

৯০ দশকের শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কলেজ স্ট্রিটে নতুন বই কিনতে যাওয়ার একটা রেওয়াজ গড়ে উঠেছিল। সেই রীতি কিছুটা কমে আসলেও সেই রেওয়াজ এখনো আছে। সে সময় ইন্টারনেটের ব্যবহার এতটা বাড়েনি। তাই রেফারেন্স বই কিনতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র ঠিকানা ছিল কলেজ স্ট্রিট।

আর সাহিত্যপ্রেমীরা প্রকাশকের দোকানগুলিতে ঘুরে ঘুরে সন্ধান করতেন নতুন প্রকাশিত বইয়ের। আজও সেই রেওয়াজ চলছে।

নবীন লেখকরা এখনও হাজির হন প্রকাশকের দফতরে। জমা দেন তাদের পাণ্ডুলিপি।

পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন প্রকাশক কলেজ স্ট্রিটে তাদের দোকানে আমন্ত্রণ করেন লেখকদের। বহু বছর ধরে চলে আসা এই প্রথা এখনো বহাল আছে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম সারির প্রায় সবকটি প্রকাশনার দফতর কলেজ স্ট্রিট। তবে শুধু প্রকাশনা নয়, কলেজ স্ট্রিটের অপর প্রাণকেন্দ্র ইন্ডিয়ান ‘কফি হাউজ’।

১৯৪২ সাল থেকে কলকাতা তথা বাংলা সাহিত্য জগতের নক্ষত্রদের অবাধ বিচরণের জায়গা এই কফি হাউজ।   সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, নবনীতা দেবসেন থেকে আজকের স্রীজাত, সুবোধ সরকার, মন্দাক্রান্তা সেন সবাই-ই কোনো না কোনো এক সময়ে কলকাতা কফি হাউজের নিয়মিত সদস্য ছিলেন।

শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সুভাষ চন্দ্র বসুসহ আরো অনেক মনীষীরাই কফি হাউজের কফির ভক্ত ছিলেন।

১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের অনেক ইতিহাস জমা আছে এই কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ার আনাচে-কানাচে। এর একটি বড় কারণ এই অঞ্চলে রয়েছে কলকাতার প্রথম সারির বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

একদিকে, যেমন রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজ, ঠিক তার পাশেই রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪০-এর দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের সুবাদে নিয়মিত আসতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর অদূরেই রয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং সংস্কৃত কলেজ।
 
কলেজ স্ট্রিট বইপাড়াতেই অবস্থিত বিখ্যাত- হেয়ার স্কুল। এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়াতেই অবস্থিত হিন্দুস্কুল।

কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে কলেজে স্ট্রিটে তৈরি হচ্ছে, আধুনিক বইবাজার- ‘বর্ণপরিচয়’। আগামী দিনে কলেজ স্ট্রিটের সব বইয়ের দোকান আধুনিক এই বই বাজারে স্থানান্তরিত হবে।

তবে কী হারিয়ে যাবে কলেজ স্ট্রিটের পুরনো ঐতিহ্য!

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।