ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার ফুটপাত এবং হকার সমস্যা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫
কলকাতার ফুটপাত এবং হকার সমস্যা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: কলকাতা পুর-নির্বাচনের ঠিক আগে কলকাতার হকারদের এক গুচ্ছ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে হকারদের চিকিৎসা বিমা, মৃত্যুর পর সাহায্য সহ নানা রকম সুযোগ দেবার কথা বলা হয়েছে।

তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হকারদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ না করার কথা প্রকাশ্য সভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

এরপর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। একদল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই হকার দরদী নীতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অন্যদল এর ফলে কলকাতার রাজপথে হকার সমস্যা বাড়বে বলে দাবি করতে শুরু করেছেন।

কয়েকদিন বাদেই পয়লা বৈশাখ। এই উপলক্ষ্যে কলকাতার গড়িয়াহাট থেকে হাতিবাগান, হাওড়া থেকে খিদিরপুর সমস্ত জায়গাতেই ফুটপাতের উপর চলছে চৈত্র সেল।

কলকাতার মধ্যবিত্ত শ্রেণী চিরকালই ফুটপাত জুড়ে হকার সমস্যা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তবে লক্ষণীয় বিষয় কলকাতার মধ্যবিত্তরাই এই হকারদের থেকে বেশি পরিমাণ কেনাকাটা করেন।

ফুটপাতের হকার এবং এলাকার অন্যান্য দোকানিদের মধ্যে একটা সংঘাত অন্তঃসলিলা নদীর মত চিরকালই ছিল । কিন্তু হকারদের বিরুদ্ধে কলকাতার নিউমার্কেটের দোকানিরা এই প্রথম টানা তিনদিন হরতাল পালন করলেন।

দোকানিদের অভিযোগ শুধু ফুটপাত নয় হকাররা গোটা এলাকা এমন ভাবে দখল করে নিয়েছে যার ফলে গাড়ি রাখা থেকে চলাফেরা করা দায় হয়ে উঠেছে খরিদ্দারদের। তবে এই হরতালের মূল কারণ এই হকারদের ফলে দোকানগুলির ব্যবসা অনেকটাই কমে গেছে।

তবে এই লড়াই নতুন নয়। ১৯৯৬ পশ্চিমবঙ্গের বাম আমলে “অপারেশন সানসাইন” নাম দিয়ে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। সেই সময় হকারদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ৬০ এর দশকে জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার হকার উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলো বামদলগুলি।

কলকাতার নাগরিকদের অভিযোগ হকারদের ভোট বাক্স ভরাবার জন্য তাদের ব্যবহার করেছে সব রাজনৈতিক দল।

২০০৫ সালের একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে কলকাতায় মোট হকারের সখায় ছিল ২ লক্ষ ৭৫ হাজার।   মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল বছরে কমবেশি ২ বিলিয়ন ডলারের সমান। বর্তমানে হকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ। এই হকারদের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের জীবন।

১৯০৫ সালের পর কলকাতা পুরসভার তরফে বেশ কিছু নিয়ম জারি করা হয়। কিছু জায়গায় হকারদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রই সেইসব নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ। অন্যদিকে পুনর্বাসন দেওয়া জায়গা গুলিতে কেনাবেচার পরিমাণ খুবই কম বলে হকারদের তরফে জানানো হয়েছে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পেয়ে খুশি হকাররা কিন্তু কলকাতার মধ্যবিত্ত মানুষের বড় অংশ মনে করছেন এই প্রতিশ্রুতিতে  তিলোত্তমার দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতগুলির কফিনে আরও একটি পেরেক মারা হল।

তাদের মতে ধীরে ধীরে কলকাতার হকাররা ফুটপাত ছেড়ে রাস্তাতেও নেমে পড়ছেন। এর ফলে যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা হলে আগামী দিনে এই সমস্যা আরও বাড়বে।

অবশেষে একটা অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করা যাক। দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক থেকে গড়িয়ে হাটের দূরত্ব ঠিক ১ কিলোমিটার। সন্ধ্যায় বেলায় এই পথ অতিক্রম করতে কখন কখন ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। কলকাতার মানুষের একটাই প্রশ্ন, কবে ফুটপাতগুলো আবার মানুষের চলার জন্য ফিরে পাবে কলকাতার নাগরিকরা ? 

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।