ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভিকটোরিয়া মেমোরিয়ালের বাঙালি কারিগর

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
ভিকটোরিয়া মেমোরিয়ালের বাঙালি কারিগর ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল ও স্যার রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জি

কলকাতা: কলকাতা শহরের কথা মনে হলেই চোখে যে ছবিটা ভেসে ওঠে তাতে ভিকটোরিয়া মেমোরিয়ালের উজ্জ্বল উপস্থিতি অনিবার্য। কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত।

কিন্তু অনেকেরই আপসোস কলকাতার এমন একটি স্থাপত্য যেটি বিশ্বে কলকাতার পরিচিতি হিসাবে গৃহীত হয় সেই স্থাপত্য নির্মাণ হয়েছে শুধুমাত্র ব্রিটিশদের হাতে।

ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির ইতিহাসটা আজ অনেকেরই জানা।

১৯২১ সালে মহারানি ভিকটোরিয়ার সম্মানে এই স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়। ১৯০৬ সালে কিং জর্জ ফাইভ-এর ইচ্ছেতে এই কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ১৯১২ সালে। যদিও তার বেশ কিছু বছর পর ১৯২১ সালে সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই মিউজিয়াম।

তৎকালীন সময়ে এক কোটি ৫ লাখ রুপি খরচ করে মাকরানা মার্বেল ব্যবহার করে এই স্থাপত্য তৈরি করা হয়। এই মাকরানা মার্বেল ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছিল তাজমহল। ব্রিটিশ প্রকৌশলীরা এই স্থাপত্যের নকশা করলেও এর পিছনে ছিলেন এক বঙ্গ সন্তান।

ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণের দায়িত্ব পায় ‘মার্টিন বার্ন কোম্পানি’। সাহেবি নাম হলেও এই সংস্থার এক অংশীদার থমাস অ্যাকুন মার্টিনের সঙ্গে আরেক অংশীদার ছিলেন বঙ্গ সন্তান স্যার রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জি।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জি বা আর এন মুখার্জি কলকাতা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এরপর তিনি শুরু করেন ব্যবসা। সেই সময় তৈরি হয় ‘মার্টিন বার্ন কোম্পানি’। যারা ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণের দায়িত্ব পায়।

পরবর্তী সময় কলকাতার এক অতিব্যস্ত সড়কের নামকরণ করা হয় আর এন মুখার্জি রোড নামে। জানা যায় ভিকটোরিয়া মেমোরিয়ালের নির্মাণের বড় অংশ এই বাঙালি প্রকৌশলীর পরিকল্পনারই অংশ।

তবে শুধু ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল নয় কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদ, বেলুর মঠ, সেন্ট অ্যান্ড্রুস চার্চ,  বিধানসভা ভবন, ইডেন গার্ডেন, গ্র্যান্ড হোটেল আর্কেড এই রকম অসংখ্য স্থাপত্য নির্মাণের পেছনে রয়েছে এই বাঙালি প্রকৌশলীর পরিকল্পনা।

শুধু তাই নয় ভারতের মুম্বাই শেয়ার বাজার, আমেদাবাদ, লখনৌ এবং বেনারসের জল প্রকল্পসহ গোটা ভারতেও অনেক ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যের পেছনের রূপকার ছিলেন এই বঙ্গসন্তান আর এন মুখার্জি।

বাঙালি বাণিজ্যে অপটু এই প্রবাদকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই প্রকৌশলী। কলকাতার ইতিহাস ঘাঁটলে বিখ্যাত স্থাপত্যগুলোর আনাচে-কানাচে পাওয়া যায় এই ধরণের নানা ইতিহাস। যেগুলো সুতানটি, গোবিন্দপুর আর কলকাতা নামের তিনটি গ্রামকে আজকের শহরে পরিণত করতে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। আর এই ইতিহাসে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু বাঙালির নাম। যারা ইতিহাসের অংশ হয়েও থেকে গেছে ইতিহাসের আড়ালে। তবে কলকাতার ইতিহাসে ডুব দিলে আর এন মুখার্জির মতো আরও বাঙালিদের খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়। এরাই কলকাতার আসল রূপকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
ভিএস/জিপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।