কলকাতা: রাজ্যের বুদ্ধিজীবি ও মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে (এপিডিআর) মাওবাদীদের মুখোশ বলে মন্তব্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এপিডিআর’র এক সাংবাদিক সম্মেলনের পর মহাকরণে তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, কলকাতা থেকে একদল মানুষ মাওবাদীদের সমর্থন করে চলেছে।
তার দাবি, এই প্রক্রিয়া বেশি দিন চলতে পারে না। নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি তার সরকারের প্রথম ৫ মাস যৌথ বাহিনীর কোনও অপারেশন করতে দেননি। কিন্তু শান্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন মাওবাদীদের হিংস্র কার্যকলাপ সব সহ্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে।
এপিডিআর এর সাংবাদিক সম্মেলনে বিশিষ্ট সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর উপস্থিতি এবং মাওবাদীদের হয়ে তার বলা কথাকেও তিনি ভালোভাবে নেননি বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তার দাবি মহাশ্বেতা দেবীকে দিয়ে বেশ কিছু মিথ্যা কথা বলানো হচ্ছে। এই সমস্ত সংগঠনগুলি জঙ্গলমহলে যে খুন খারাপি চলছে তার প্রতিবাদ করে না বলে তিনি জানান।
আর এপিডিআর এর মেট্রো চ্যানেলে সভা বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি দেন, মেট্রো চ্যানেলের পরিবর্তে রানী রাসমনি রোড, গান্ধীমূর্তির পাদদেশ বা কলেজ স্কোয়ারে এই সভা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিদির্ষ্ট দিনে কোন নির্দিষ্ট সংগঠনকে যে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে তা নাও হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এপিডিআর এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আগামী ২৩ ও ২৪ তারিখ মেট্রো চ্যানেলের সামনে এপিডিআরসহ ২১টি সংগঠনের যৌথ সভা ও অনশন কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হলে তা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। জঙ্গলমহল থেকে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতেই ওই সভার আয়োজন।
তাদের মতে এই সভা না করতে দিয়ে বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে। মহাশ্বতা দেবীও তাদের অভিযোগে সায় দিয়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার উপর জোর দেন। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির (এপিডিআর) সাংবাদিক সম্মেলন মহাশ্বেতা দেবী বিরুদ্ধেই সম্মেলনে পরিণত হয়।
এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, এতোদিন তিনি যে শিবিরের প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন আজ তার সরাসরি বিরোধীতা করছেন কিনা তা স্পষ্ট করার জন্য।
এর উত্তরে মহাশ্বেতা দেবী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কারা, যাদের কাছে আমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। ’ মেট্রো চ্যানেলে এপিডিয়ারের সভা বাতিল করে দেয় বর্তমান তৃণমূল সরকার। তারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এপিডিআরসহ ২১টি সংগঠন প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন। বহু বিশিষ্ট জনেরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন।
এপিডিআর-এর সম্পাদক দেব প্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘এপিডিআর সভা করার অনুমতি চেয়ে পায়নি তা বিরল ঘটনা। ৬৪ বছরে যা হয়নি আজকের জনগণের সরকার তাই করল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে তা কেউ সহ্য করবে না। ’
এমনই মত পোষণ করেন শঙ্খ ঘোষ, কৌশিক সেন, প্রতুল, অপর্না সেন, বিভাস চক্রবর্তী, কবির সুমন, জয়া মিত্র, নবারুন ভট্টাচার্য ও অন্যান্যরা।
মহাশ্বেতা দেবী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর উচিত শীঘ্রই তার হুকুমত তুলে নেওয়া। জেনেশুনে ফ্যাসিজম ডেকে আনবেন না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গলমহল থেকে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে, কারণ সেখানকার মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। ’
জয়া মিত্র বলেন ‘এতো তাড়াতাড়ি (বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে) আবার প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হবে তা ভাবিনি। ’
এদিন এপিডিআর তাদের আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৩ ও ২৪ শে নভেম্বর ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে সভা করবে এপিডিআর। ২৫ নভেম্বর বউবাজার থেকে মিছিল বের হয়ে রাইটার্স পর্যন্ত যাবে। বাধা পেলে রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ করবে এপিডিআর।
এদিন এপিডিয়ার দাবি করে ৫-৯ বছর ধরে ৭০,০০০ বন্দির বিচার হয়নি। তাদের মুক্তি দিতে হবে। বন্দিদের মধ্যে সিপিআই, মাওবাদী, এসইউসিআই কংগ্রেস সকলেই আছে।
এদিকে, বিতর্কিত তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনকে টিকিট দেওয়া মস্তবড় ‘ভুল’ হয়েছিল। মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা স্বীকার করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি।
এদিন এপিডিআর-এর করা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, আমরা চেয়েছিলাম শিল্পী-সাহিত্যিকদের মধ্যে কাউকে প্রার্থী করতে। তখন জানতাম না উনি মাওবাদীদের এত বড় সমর্থক। জানলে টিকিট দিতাম না।
তবে তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, ওই সাংসদকে (কবীর সুমন) বহিস্কার করতে তার এক সেকেন্ডের বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরতে বিশ্বাসী। কিন্তু এরকম চলতে থাকলে তৃণমূল সংসদীয় কমিটি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১