ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার হাসপাতালে আগুন: নিহত ৭৩, হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১১
কলকাতার হাসপাতালে আগুন: নিহত ৭৩, হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল

কলকাতা এএমআরআই হাসপাতাল থেকে: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় এএমআরআই (অ্যাডভান্সড মেডিকেয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট) হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।



এখন পর্যন্ত ৮৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মুকুন্দপুর এবং সল্টলেকের এএমআরআইয়ের শাখা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ৭৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশই মারা গেছেন ঘন ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে।

অনেক রোগী, চিকিৎসক ও নার্স হাসপাতালের ভেতর আটকা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরণের সরবরাহ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে হাসপাতালটির বেজমেন্টে প্রথম আগুন লাগে। এরপর বেজমেন্ট থেকে আগুনের ধোঁয়া ছয়তলা হাসপাতালটির প্রতিটি তলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সেখানে ১৭০টি বেডেই রোগী ভর্তি ছিল। আইসিসিইউ ও আইটিটিইউতেও রোগী ছিল।

ভোর ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন আসে, আনা হয় ৩টি ল্যাডার। স্থানীয় লোকজন, দমকলকর্মী ও পুলিশ উদ্ধার কাজ শুরু করে।

দমকলকর্মীরা ল্যাডারের সাহায্যে ওপরে উঠে ভবনের বাইরের কাঁচ ভেঙে রোগীদের কপিকলের সাহায্যে নিচে নামিয়ে আন হয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালের বেজমেন্টে প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। ছিল বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ। যা থাকার কথা নয়। বেআইনিভাবে গাড়ি রাখার গ্যারেজে এগুলি রাখা হয়েছিল। শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে কেউ আগুনে পুড়ে মারা যায়নি। সবাই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ’

এই হাসপাতালে অনেক রোগীই মূমুর্ষ ছিলেন। অনেক অচেতন অবস্থায় ছিলেন। তার ফলে ঘুমের মধ্যে বা অচেতন অবস্থায় তারা মারা যান। হাসপাতালের আইসিসিইউ ও আআইটিটিইউর সব রোগী মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে ভীড় করেন। তাদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বচসা শুরু হয়। রোগীদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতির জন্য এতবড় ঘটনা ঘটেছে। তারা হাসপাতালের কাছে তালিকা দাবি করেন।

কর্তৃপক্ষ তালিকা না দিতে পারায় ক্ষুব্ধ মানুষজন হাসপাতালের একাংশে ভাঙচুর করেন।

আহত রোগীদের কলকাতার অন্যান্য হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মৃতের ঘটনায় কলকাতার এএমআরআই (অ্যাডভান্সড মেডিকেয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট)  হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, ‘হাসপাতালের মালিকদের গ্রেপ্তার করা হবে। ’

এদিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বাংলাদেশি মারা গেছেন বলে তার ছেলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন। ওই বাংলাদেশি রোগীর নাম গৌরাঙ্গ মণ্ডল।

হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সত্যব্রত উপাধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আসা মাত্রই ভোর সাড়ে ৪টার সময় ভবনটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ধোঁয়ার ফলে রোগীদের মৃত্যু ঘটেছে। সংখ্যাটা বলতে পারব না। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে। নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘এদের আগুন নেভানোর কোনও অবকাঠামো নেই। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভোর ৩টা ২০ মিনিটে বেজমেন্টের এসি প্ল্যান্টে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগে। সেখান থেকে এসির পাইপলাইনে বিভিন্ন ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। ’

তিনি আরও বলেন, ‘দমকলকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবর দেয়নি। পুলিশ দমকলকে খবর দেয়। ১০-১২ মিনিট পরে ভবনের বাইরের গ্লাসগুলি ভেঙে উদ্ধার কাজ শুরু করে। প্রথমেই যদি গ্লাসগুলো ভাঙা যেত, তাহলে অনেককেই বাঁচানো যেত। ’

এদিকে হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে পুলিশের সাথে উদ্বিগ্ন রোগীদের পরিবার ও স্থানীয় মানুষজনের দফায় দফায় সংর্ঘষ হয়েছে। পুলিশ উত্তেজিত হয়ে লাঠি চার্জ করেছে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লাঠি চার্জ বন্ধ হয়।

রোগীদের পরিবারের একজন সুমিত দত্ত ঘটনাস্থলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এদের কোনও সিকিউরিটি নেই। আমাদের খবর দেওয়া হয়নি। স্থানীয় বস্তির ছেলেরা উদ্ধার কাজ করছে ভোর ৩টা থেকে। তাদের প্রথমে হাসপাতালের লোকজন ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। হাসপাতাল এখন মর্গের চেহারা নিয়েছে। ’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩০টি লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৭৩। আহত হয়েছেন অনেকই। এর মধ্যে হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরাও রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।