কলকাতা: মাত্র ৮ মাস আগে রাজ্যে বামদের ভরাডুবি হয়েছে। তবে এরই মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া কিছুটা হলেও নিজেদের ঘুরিয়ে নিতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার জলপাইগুড়ি জেলার ১১টি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৭টি কলেজের এস এফ আই এবং বাম ছাত্র মোর্চা সাতটি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে ৪টির বেশি কলেজে জয়লাভ করতে পারেনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র পরিষদের জোট।
শিলিগুড়ি মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এস এফ আই বিপুল জয় পেয়েছে। কলেজের ২২টি আসনের সব কটিতেই এস এফ আই প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এবারও মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদ এস এফ আই-র হাতেই থাকলো। কিন্তু শিলিগুড়ির সূর্য সেন কলেজ এবং বাগডোগরা কলেজের নির্বাচনে তৃণমুল ছাত্র পরিষদ জয়ী হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র পরিষদ জোটের কাছ থেকে এস এফ আই ছিনিয়ে নিতে পেরেছে। মোট ৪৭টি আসনের মধ্যে এস এফ আই ২৯টি এবং তৃণমূলের জোট ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছে।
ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরেই কলেজে হামলা চলে। লাঠি নিয়ে হামলা করে ও এলোপাথাড়ি ইঁট-পাথর ছুঁড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা । এই হামলায় ১০জন এস এফ আই কর্মী আহত হয়েছেন, তাদের আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ধূপগুড়িতেও কলেজ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল। সকালে ধূপগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে তৃণমূলীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ, এই ঘটনায় ১জন ছাত্রীসহ ৩নজন আহত হয়েছেন। কিন্তু ধূপগুড়ি সুকান্ত কলেজের নির্বাচনে এস এফ আই ৩৬টি আসনের মধ্যে ৩২টিতেই জয়ী হয়েছে।
ফলাফল ঘোষণার পরে বিকালে ফের কলেজে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। তাদের হাতে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরাও নিগৃহীত হন। সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হন, ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিসকে লাঠি চালাতে হয়, দু-রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসও ছুঁড়েছে পুলিশ। এই হামলায় ১৮জন এস এফ আই কর্মী আহত হয়েছেন। ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল ও জলপাইগুড়ি হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।
ফালাকাটা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মোট ২৮টি আসনের মধ্যে ২২টিতে এস এফ আই জয়ী হয়েছে। ময়নাগুড়ি কলেজে এস এফ আই এবং বাম ছাত্র মোর্চা ২৪টি আসনে এবং ছাত্র পরিষদ জোট ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। মালবাজার পরিমল মিত্র কলেজে এস এফ আই এবং বাম ছাত্র মোর্চা ২৩টি আসনে এবং ছাত্র পরিষদ জোট ১২টিতে জয়ী হয়েছে।
বীরপাড়া কলেজে বামপন্থী ছাত্র মোর্চা ২৬টি আসনে এবং ছাত্র পরিষদ জোট ৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের পি ডি মহিলা কলেজে এস এফ আই এবং পি এস ইউ-র জোট ৩৪টি আসনে এবং ছাত্র পরিষদ ৪টি আসনে জয়ী হয়েছে।
তবে জলপাইগুড়ির এ সি কলেজ, জয়গাঁ কলেজ, আলিপুরদুয়ার বিবেকানন্দ কলেজ, এবং কামাখ্যাগুড়ি শহীদ ক্ষুদিরাম কলেজে ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে গেছে।
কিন্তু বাগডোগরা কলেজে এস এফ আই-কে জয়ী ঘোষণা করার পরেও ষড়যন্ত্র করে এস এফ আই-কে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বাগডোগরা কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৪৬। গণনা শেষে দেখা যায় ২৪টি আসনে এস এফ আই প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ১৯টি ও ছাত্র পরিষদ ৩টি আসনে জয়ী হয়। আনন্দে মেতে ওঠে এস এফ আই সমর্থকরা। এস এফ আই নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন, এই সময় কলেজের অধ্যক্ষের কাছে একটি ফোন আসে।
তিনি তখন ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রেখে বলেন, তিনটি আসনে ফের গণনা হবে। কলেজ অধ্যক্ষ তিনটি আসনের ব্যালট গণনা করা হয়। এরপরেই তিনি ঘোষণা করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ১৯টি আসনে নয়, ২২টি আসনে জয়ী হয়েছে। দুই ছাত্র পরিষদের মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫।
যদিও ছাত্র পরিষদ কলেজে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এস এফ আই-র আসন সংখ্যা ২৪ থেকে ২১-এ নেমে আসে। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এস এফ আই সমর্থকরা। তাঁরা পুনরায় ঐ তিনটি আসনে গণনার দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এস এফ আই-র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
ছাত্র সংসদটি এস এফ আই-র দখলে ছিল। এই ঘটনার পর ছাত্র পরিষদের সাধারণ সমর্থকরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারাও কলেজ অধ্যক্ষ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন।
ভারতীয় সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১২