চাঁপাইনবাবগঞ্জ: তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রীসহ কয়েকটি বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ওপর স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। দেশটির মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী ইত্যাদির মতো কিছু পণ্য ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়েও রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা।
তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কলম বিরতি সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত থাকলেও আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে।
কর্মবিরতি শেষে বিকেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়। এ বন্দর দিয়ে পাঁচ/সাতজন রপ্তানিকারক গার্মেন্টস পণ্য, জুট পণ্য, আরএফএলের কিছু পণ্য, কিছু ফাস্টফুড এবং তুলা জাতীয় পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এ বন্দর দিয়ে মাত্র পাঁচ ধরনের পণ্য রপ্তানি হলেও রপ্তানি নিষিদ্ধের তালিকায় শুধু গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে। ভারতের নতুনভাবে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় এ বন্দর দিয়ে শুধু গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এতে রপ্তানিতে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।
রবি ও সোমবার অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও কোনো গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়নি।
সোনামসজিদ স্থল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ছয় মাসে এ বন্দর দিয়ে প্রায় চার হাজার টন তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যার রপ্তানি মূল্য প্রায় ৫৬ লাখ তিন হাজার ৩৯১ ডলার। রপ্তানি হওয়া পোশাকের তালিকায় রয়েছে শাড়ি, লুঙ্গি, সোয়েট শার্ট ও টি-শার্ট। এসব পণ্যের বেশির ভাগ বন্দর ঘেঁষা মালদা জেলায় রপ্তানি হয়ে থাকে।
সোনামসজিদ বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার মো. কামাল হোসেন জানান, গত শনিবার তিন ট্রাক গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রোববার এ বন্দর দিয়ে ১২টি ট্রাকে চটের বস্তাসহ বিভিন্ন পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর আমদানি হয়েছে তিনশত ট্রাক বিভিন্ন পণ্য। এছাড়া সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৯০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং চারটি পাটজাত পণ্যের ট্রাক ভারতে গেছে। রোববার একটি পোশাকের ট্রাক ভারতে প্রবেশ করতে না পেরে বন্দর থেকে দেশে ফিরে এসেছে। তবে রপ্তানি নিষিদ্ধের তালিকায় থাকা কোনো পণ্য রোববার এ বন্দরে আসেনি বা বন্দরে আটকা পড়েনি।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আলহাজ জয়নাল আবেদিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আওয়াল জানান, তিনি গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি না করলেও এ বন্দর দিয়ে মূলত দুজন রপ্তানি করে থাকেন। ভারতের নতুন এ নিষেধাজ্ঞার কারণে এ বন্দরে রপ্তানিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
জোহরা এন্টারপ্রাইজের মালিক নূর আমীন বলেন, এ বন্দর দিয়ে বড় চালান না গেলেও ছোট ছোট চালানে পোশাক রপ্তানি হয়, যারা এসব রপ্তানি করেন, তারা বড় ব্যবসায়ীদের মতো সমুদ্র বা আকাশপথে রপ্তানি করতে পারবেন না। মূলত ছোট রপ্তানিকারকরাই এ আদেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
অপর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রুহুল আমিন জানান, ভারতের রপ্তানি নিষিদ্ধের তালিকায় যেসব পণ্য আছে, তার মধ্যে শুধু গার্মেন্টস পণ্যটি এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হতো। তবে সমুদ্র ও আকাশপথে রপ্তানির সুযোগ থাকায় এবং গার্মেন্টস পণ্য ঢাকা হয়ে রপ্তানি হওয়ায় এ বন্দরে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না।
গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক রওশন আলী জানান, শনিবার তার তিনটি গার্মেন্টস পণ্যের ট্রাক ভারতে রপ্তানি করা হলেও রোববার কোনো পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬০/৭০ ট্রাক গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির আদেশ ছিল। কিন্তু ভারতের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তের কারণে তিনি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সাফটা চুক্তির আওতায় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তার ৬০/৭০ ট্রাক গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির আদেশ থাকলেও ভারতের আকস্মিক এ আদেশ হতাশাজনক। ভারতের আমদানিকারকদের দেওয়া গার্মেন্টস পণ্যের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকসহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোনামসজিদ বন্দরের কাস্টমস সহকারী কমিশনার আরিফুল ইসলাম জানান, নতুন এ নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্যান্য বন্দরের মতো কোনো রপ্তানিযোগ্য পণ্য আটকা পড়েনি।
এসআই