ঢাকা: বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প গত ২ এপ্রিলকে ‘লিবারেশন ডে’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন দেশের আমদানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে তিনি ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেন। সেই মেয়াদ বুধবার শেষ হওয়ার আগেই তিনি নতুন করে এ চিঠি পাঠালেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। নতুন শুল্ক আরোপ নিয়ে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে তা স্থগিত করে বুধবার ৯ জুলাই মিটিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান সভায় যোগ দেবেন। ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হবেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
জানা গেছে, নতুন শুল্ক আরোপ নিয়ে সোমবার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এপ্রিলে স্থগিত করা শুল্ক ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা চিঠিতে ট্রাম্প জানান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কহার নির্ধারণ এবং বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তিতে ট্যারিফসহ তিনটি শিডিউল দেওয়ার কথা। শিডিউলগুলো পেলে সেগুলোর ওপর কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা চুক্তির খসড়ার ওপর এরই মধ্যে আমাদের মতামত পাঠিয়েছি। এ মতামত তাদের পাঠানো চুক্তির খসড়ার বিপরীতে লিখিতভাবেই জানানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে একটি মিটিং হয়েছে। আরেক দফা মিটিং হবে ৯ জুলাই। সেই বৈঠকে আমি অনলাইনে যুক্ত থাকব। উভয় পক্ষ সব বিষয়ে একমত হলে দ্রুতই চুক্তি সম্পন্ন হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চুক্তির সব বিষয়ে যদি বাংলাদেশ সম্মত না হয় তাহলে তা সই হবে না। আর যদি সম্মত হয়, তাহলে হয়তো হবে। কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে বাংলাদেশ সম্মত হতে পারেনি। সেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র একমত না হলে চুক্তি সই হবে না। যদি উভয় পক্ষ সম্মত হয়, তাহলে সই হবে। ৯ জুলাই তাদের একটা সময়সীমা। কিন্তু সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার তারিখ ৯ জুলাই না। এ তারিখের পরেও আলোচনা করা যাবে।
এদিকে গত ২৬ জুন ওয়াশিংটনে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খালিলুর রহমান। গত ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি সভা হয়। ওই সভায় যোগ দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি জানিয়েছিলেন, ট্যারিফ আরোপ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অটুট রাখা নিয়ে সংবেদনশীল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোর শুল্ক শূন্যের কাছাকাছি। হয় শূন্য, নয়তো শূন্যের কাছাকাছি। এর পরও তারা বেশকিছু প্রডাক্ট লাইনে শুল্ক সুবিধা চায়। এছাড়া তারা শুল্ক আরোপ করবে। সেক্ষেত্রে আমরা যেন প্রতিযোগী হিসেবে থাকতে পারি, সে বিষয়ে তারা সংবেদনশীল। আশা করা যায়, ইতিবাচক একটা কিছু হতে পারে।
প্রসঙ্গত, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকপণ্য রপ্তানিতে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ হারে শুল্ক নিয়েও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় বেশি ছিল। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থমূল্য বিবেচনায় দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।
জিসিজি/আরআইএস