জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে দুই বিভাগে (রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন) কীভাবে সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, তার জন্য নীতিমালা করার পরামর্শ দেবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল রাখার লক্ষ্যে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
রোববার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল রাখার লক্ষ্যে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অগ্রগতি সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ কথা জানান।
এ সময় কমিটির সদস্য শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা এরইমধ্যে পাঁচটি বৈঠক করেছি। এখন আমরা মাঠপর্যায়ের আয়কর ও শুল্ক বিভাগের কার্যক্রম দেখব। এনবিআর ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিদের মূল বক্তব্য জলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অটুট রাখতে হবে। এছাড়া এনবিআর ভেঙ্গে যে দুইটা বিভাগ হবে একটা রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগ সেখানে শুধু ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হবে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এখন তারা আর আগের অবস্থানে নেই।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেছেন তাদের গত দুই মাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা এনবিআর কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার। এনবিআর সংস্কার কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের পূর্ণসমর্থন আছে। তারা আরেকটা বিষয়ে বলেছেন শাস্তির ক্ষেত্রে, কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে, কাউকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। এগুলো সব ঠিক আছে তবে একটু ধীরগতি অবলস্বন করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেখেছি এনবিআর অধ্যাদেশ নিয়ে সমস্যা কোথায়। সেখানে আমরা দেখলাম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারের যে বিরোধ, সেটাই মূল কারণ। তবে অধ্যাদেশ কেন্দ্র করে এটা হলো কেন, সেখানে দুইটি কারণ রয়েছে। এক হলো অধ্যাদেশে কিছু মৌলিক ত্রুটি আছে। যারা এই অধ্যাদেশ করেছে তারা একটু চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, যেমন সরকারের উপযুক্ত কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি রাজস্ব বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ পাবেন। এখন উপযুক্ত ব্যক্তি কে, এটি একটি সমস্যা। একই সমস্যা আছে অধ্যাদেশের ৭ ও ৩ অনুচ্ছেদে। সরকারের রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অধ্যাদেশের এই ধরনের কতগুলো সমস্যা চিহ্নিত করেছি। আমরা যেহেতু পরামর্শক কমিটি, সেহেতু আমরা এগুলো সমাধানের একটি পরামর্শ দেব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনের পথ হলো অধ্যাদেশে যেসব ত্রুটি আমরা পেয়েছি সেগুলো নিয়ে কাজ করা। এরপর আরেকটি বিষয় হলো এনবিআর আর থাকছে না। এনবিআরে কেউ চাকরি করে এটা শুনলে সবাই একটা অট্টহাসি দেয়। মানুষ কেন হাসি দেয় এটা আমরা আপনারা সবাই কিন্তু জানি। তো এজন্যই এনবিআর না থাকাটা সবার জন্য ভালো। দুইটা ডিভিশন এর কথা বলা হয়েছে, সেটা হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, তাদের দাবি শুধুমাত্র দুটি ক্যাডারের সদস্য নিয়ে রাজস্ব বিধি ও রাজস্ব বিভাগ গড়তে হবে। এই দাবি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক৷ এটি গ্রহণযোগ্য না৷ একইসঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারি, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ওরা বলেছে যে সব লোক আমাদের হতে হবে এটাও গ্রহণযোগ্য না। এজন্য আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো নতুন দুইটা বিভাগ হবে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের নতুন যে দুটি বিভাগ হবে (রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন) এখানে সচিব কে হবে সেটার জন্য একটা নীতিমালা করতে হবে৷ এই এই যোগ্যতা থাকলে তাকে সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হবে, এমন একটা নীতিমালা থাকতে হবে। যেহেতু রাজস্ব কার্যক্রম চালাতে হবে সেহেতু নীতিমালা করা প্রয়োজন। শুধু সচিব নয় ঊর্ধ্বতন যে পদগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্যও নীতিমালা করতে হবে।
তিনি বলেন, নিয়োগের নীতিমালা করতে হবে, যেন রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমটা আরও বেগবান হয়। রাজস্ব আদায় অত্যন্ত কম, এটা যেন বাড়ে, গ্রাহক সেবা বাড়ে ও বন্দরে কন্টেইনার জট যেন না থাকে ও হয়রানি বন্ধ হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন আমরা ফিল্ড ভিজিট করে একটা পরামর্শ অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেব। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় যা করার করবে।
জিসিজি/আরএইচ