ঢাকা, সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি বিদেশি গ্রুপের

নিউজ ডেস্ক    | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০০, জুলাই ১৪, ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি বিদেশি গ্রুপের

২০০৮ সালের এক চুক্তি ভঙ্গ এবং বিনিয়োগ সুরক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে আইসিবি ফিনান্সিয়াল গ্রুপ হোল্ডিংস এজি।

সুইজারল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত এই বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেডের বৃহৎ শেয়ারহোল্ডার।

এর আগে ব্যাংকটির নাম ছিল ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড (ওবিএল)।

৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে গ্রুপটি অভিযোগ করে, ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সই করা "শেয়ার বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি"র গুরুত্বপূর্ণ শর্তসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক মানেনি।

এই চুক্তির মাধ্যমে তখনকার সমস্যাগ্রস্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পুনর্গঠন ও মূলধন পুনঃসংস্থান করা হয়েছিল। চুক্তির অংশ হিসেবে গ্রুপটিকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, তারা যে শেয়ার সাবস্ক্রাইব করবে সেগুলো কোনো ধরনের দাবি বা প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

তবে গ্রুপটি এখন দাবি করছে, সাবেক শেয়ারহোল্ডারদের দায়ের করা একাধিক আইনি জটিলতার কারণে ব্যাংকের ওপর তাদের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হয়েছে।

চিঠিতে গ্রুপটির চেয়ারম্যান জোসেফিন সিভারেত্নামের সই রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে এখনো বেশ কিছু মামলা চলমান, যেগুলোতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেছিল সেগুলো বিক্রি করা বৈধ ছিল কি না।

বিশেষ করে, ২০১৪ সালের একটি মামলার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল, এই বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গ্রুপটি তাদের শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না—ফলে কার্যত শেয়ার লেনদেন স্থগিত হয়ে পড়ে।

চিঠিতে বলা হয়, যদি সাবেক শেয়ারহোল্ডাররা আদালতে জয়ী হয়, তাহলে তারা ব্যাংকের বড় অংশের মালিকানা পেয়ে যাবে, যা আইসিবি গ্রুপের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলেও এতে অভিযোগ করা হয়।

চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও নিয়োগের জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা অনুমোদন করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে তাদের একজন কর্মকর্তাকে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই অনিরাপদ ও অনিশ্চিত পরিবেশে নতুন বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে নতুন করে অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে।  

শেয়ার হস্তান্তরের ওপর চলমান আদালতের নিষেধাজ্ঞা সম্ভাব্য কৌশলগত অংশীদারদেরও নিরুৎসাহিত করছে বলে জানায় গ্রুপটি।

চিঠির শেষে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি ও গ্রুপটির বিনিয়োগ রক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা ২০০৮ সালের চুক্তিকে বাতিল বলে বিবেচনা করবে।

সেই ক্ষেত্রে গ্রুপটি তাদের ৩৫০ কোটি টাকার সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ফেরত চেয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করবে। সেটি সম্ভব না হলে, বিচার পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না।  

এই চিঠির অনুলিপি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরেফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, এই বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি এবং সম্প্রতি এর কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি আরও জানান, তিনি চিঠির বিষয়ে কিছু জানেন না।

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।