বগুড়া: এখন আর বেজে ওঠে না সাইরেনের আওয়াজ। থেমে গেছে খট খট শব্দও।
এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে হাজারও শ্রমিকের কাজের ঠিকানা। তাই আগের মতো এখন আর খেটে খাওয়া শ্রমিকদের দিন-রাতের কাজের কোলাহলও চোখে পড়ে না।
মুক্তবাজার অর্থনীতি আর ভারত থেকে চোরাই পথে আসা পণ্যের দাপটে টিকতে পারেনি ষাটের দশকে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বগুড়ার ভারী শিল্প কারখানাগুলো। যা আজ বিলুপ্তির পথে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বগুড়ায় এখনও আগের মানের কারখানাগুলোতে ব্যাপক শিল্পায়নের ছোঁয়া লাগেনি। বরং একে একে
সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে লে অফ ঘোষণা করা হয়েছে।

বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ফের চালুর কথা বারবার বলঅ হলেও, সেই প্রতিশ্রুতি রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এককালের শিল্প নগরী বগুড়া এখন কেবলই অতীত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া কটন স্পিনিং কোম্পানি লিমিটেড ও জামিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ স্বাধীনতার পর জাতীয়করণ করা হয়।
পরে তা ব্যক্তি মালিকানায় স্থানান্তরের টানা হেঁচড়ায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের আওতায় থাকা প্রায় ১৪টি শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থায়ীভাবে বেকার
হয়ে পড়েন প্রায় ৪ হাজার দক্ষ শ্রমিক।
এছাড়া পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব, প্রয়োজনীয় (বিদ্যুৎ ও ফার্নেস ওয়েল) জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি ও দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধির কারণে কাঁচামাল আমদানিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অব্যবস্থাপনায় তাজমা সিরামিক ও জাহেদ মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার অবস্থাও করুণ আকার ধারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে লে অফ ঘোষণা করা তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। আর জাহেদ মেটাল চালু রাখা হলেও উৎপাদন ছিল না বললেই চলে।

১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে তৎকালীন শিল্প ব্যাংক, আইসিবি এবং আইডিবির আর্থিক সহায়তায় ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান জাহেদ ওয়্যার অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
কিন্তু কারিগরি ত্রুটি, সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে এখনও পর্যন্ত উৎপাদনে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নে বগুড়ায় গড়ে তোলা হয় বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) শিল্প নগরী।
পৌরশহরের ফুলবাড়ী মৌজায় ১৯৬৪ ও ১৯৮০সালে মোট ৩৩ দশমিক ১৭একর জমি অধিগ্রহণ করে করা হয়। এরপর ১৯৮০ ও ১৯৮৩ সালে প্রায় ১কোটি ৭৯লাখ ৯৬হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই বিসিক শিল্প নগরী।
বগুড়া বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, এখানে ৯০টি উৎপাদনযোগ্য শিল্প ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে প্রকৌশল শিল্প, কেমিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, খাদ্য ও সহায়ক শিল্প, পেপার বোর্ড মুদ্রণ, গ্লাস ও সিরামিক শিল্প অন্যতম।

এছাড়া উৎপাদনযোগ্য ৩টি শিল্প ইউনিট থাকলেও আইনি জটিলতায় আজও আলোর মুখ দেখতে পারেনি।
সূত্রমতে, বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতার মুখেও বগুড়ায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজারের মতো ইঞ্জিনিয়ারিং কলকারখানা গড়ে উঠেছে। যা এককালের শিল্প নগরীখ্যাত বগুড়ার মর্যাদা রক্ষায় কিছুটা হলেও অবদান রেখে চলেছে।
বগুড়া শহর ও শহরতলী এবং উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এসব কারখানায় স’মিল, পানির পাম্প, কাটার মেশিন, তেলের ঘানি, ড্রিল মেশিন, ধান ও চিনি ভাঙানোর মেশিন, চিনি কলের মূল্যবান বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রাংশও তৈরি হচ্ছে।
এসব কারখানায় কাজ করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক স্বল্প শিক্ষিত শ্রমিক। পাশাপাশি প্রতি বছর সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থও।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
এমবিএইচ/এমএ