ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সুতা কাটা ঘুড়ির মতো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৯
‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সুতা কাটা ঘুড়ির মতো’

ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সুতা কাটা ঘুড়ির মতো। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।

রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রারম্ভিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রবৃদ্ধির আলোচনায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হারে ২৩ শতাংশের মধ্যেই উঠানামা করছে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ।

অথচ প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০, ৬ থেকে ৭ এবং ৭ থেকে ৮ এ চলে গেল। বাড়তি বিনিয়োগ ব্যতিরেকে এই প্রবৃদ্ধি বাড়ার কারণটা কী? আর ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ সবচেয়ে কম,অথচ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের ক্ষেত্রে তারল্য সমস্যা রয়েছে, অথচ উনারা বলছেন প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। পুঁজিবাজারের মধ্যে বড় ধরনের সংকট রয়েছে।

তিনি বলেন, যে কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে সেগুলো দাম ধরে রাখতে পারছে না। এরপরেও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আমার কাছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পরিমিতি এক ধরনের সুতা কাটা ঘুড়ির মতো। অর্থাৎ বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।  

‘যেকোনো তথ্য বিনিময় হয় প্রবৃদ্ধি নিরূপণ করার জন্য, যেটা আমাদের নেই। যারা এই তথ্যের ভিত্তিতে এটা করেন, তারা প্রকাশ্যে এসে জনগণের সামনে তাদের মূল্যায়নের পরিধিগুলো তুলে ধরুক। আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি। ’ 

তবে তাদের তথ্য-উপাত্ত বর্তমান অর্থনীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, তথ্য-উপাত্তের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার নিজে এবং নিঃসন্দেহে নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তথ্য-উপাত্ত অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের প্রতিবেদনে চারটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার ও বাণিজ্যিক ভারসাম্য। বর্তমানে অর্থবছরের যে বাজেট রয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে চাইলে এই চারটি বিষয়ের ওপর সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা হলো সরকার আমাদের প্রস্তাবনাগুলো ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে পুনর্বিবেচনা করুক।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। যা ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ দমন করা গেলে আমাদের দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি হতে পারত।

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খেলাপি ঋণ আদায় হলে এর মাধ্যমে আলাদাভাবে বাংলাদেশের চলমান অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল। যেমন- তিনটি পদ্মা সেতু অথবা তিনটি পদ্মা রেলওয়ে ব্রিজ, তিনটি মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট, পাঁচটি মেট্রোরেল অথবা সাতটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।

গবেষণায় আরও তুলে ধরা হয়, ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষে মোট খেলাপি ৪২ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকের। কিন্তু ২০১৮-১৯ এসে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশে।

ব্যাংকিং খাতের মূলধন সম্পর্কে বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মূলধনের অপর্যাপ্ততা একটি বড় সমস্যা। ঋণ বিতরণের তুলনায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এ কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে কল মানি থেকে দৈনিক ভিত্তিতে টাকা ধার করার প্রবণতা। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে কিছু বিশেষ ব্যাংকে সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে আমানত বাড়ানো হচ্ছে। যা আর্থিক খাতের জন্য মোটেও সুখকর নয়। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংকে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা তারল্য সরবরাহ করেছে সরকার। এ কারণে খারাপ ব্যাংকগুলো আরও উৎসাহিত হবে বলে ধারণা সিপিডির।

ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন তথ্য পূর্বের তুলনায় অনেকটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়ায় সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাব থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিচার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ এবং সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে পুঁজিবাজার সম্পর্কে বলা হয়, বাজারে তারল্য সংকট নেই। দুর্বল আইপিও, আর্থিক নিরিক্ষক প্রতিবেদন মূল্যায়ন, বিও অ্যাকাউন্টগুলোর অস্বচ্ছতা ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নবিদ্ধ লেনদেনের কারণে বাজার স্থির হচ্ছেনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
এসএমএকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।