তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল), অগ্রণী, জনতা ও সোনালী ব্যাংকে ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়া হবে। তবে এরমধ্যে সোনালী ব্যাংকের একটু সময় লাগবে।
রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি এ কথা জানান।
এসময় বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। সাতটি প্রতিষ্ঠান ঠিক করা হয়েছে। এরমধ্যে ২টি বাজারে আছে। তাদের শেয়ারের পরিামণ বাড়ানো হবে। একটা জায়গা নিয়ে সবসময় আমরা চিন্তাগ্রস্ত, সেটি হচ্ছে পুঁজিবাজার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবার হচ্ছে অর্থনীতির রিফ্লেকশন, অর্থনীতির যে ফান্ডামেন্টাল সেই ফান্ডামেন্টালের উপর সবসময় অবস্থান করে পুঁজিবারজার। কিন্তু আমাদের আমাদের দেশর পুঁজিবাজার কেন যেন অর্থনীতির সঙ্গে অ্যালায়েন নয়। অর্থনীতির যে গতিশীলতা তার সঙ্গে পুঁজিবাজার যায় না। পুঁজিবাজার এ রকম হওয়ার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। আমরা লক্ষ্য করলাম যে বাজারে কিছুটা মিসম্যাচ রয়েছে। বাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ কম। যারা বিনিয়োগ করে নিজস্ব উদ্যোগে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম হলে কিছু সময় বাজারে ভলাটিলিটি (বিশৃঙ্খল) বেশি থাকে। এ কারণে বাজার কমে গেলে খারাপ ইঙ্গিত বহন করে।
তিনি বলেন, আমরা দেখলাম যে, আমাদের পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ জন্য সরকারে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো পুঁজিবাজারে আসা উচিত সেগুলোকে আমারা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসবো। এ লক্ষ্যে সরকারি যেসব ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে একটির শেয়ার বাড়ানোসহ ৫টি ব্যাংক আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসবো। ইতোমধ্যে বাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের শেয়ার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করবো। পাশাপাশি আমরা নতুনভাবে শেয়ারবাজারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে (বিডিবিএল) নিয়ে আসবো। এরপর অগ্রণী, জনতা এবং সর্বশেষ আমরা সোনালী ব্যাংককে নিয়ে আসবো। আমরা এ বিষয়ে একটি কামিটিও করে দিয়েছি। কমিটিতে পাঁচটি ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকবে এবং এটিকে দেখাশোনা করবে আইসিবি।
কবে এসব ব্যাংক বাজারে আসবে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা অক্টোবরের পরে যাবো না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই আমরা এগুলো করে ফেলবো। এ বছরের মধ্যেই আমরা ভালো কাজ যা আছে করে ফেলবো। সোনালী ব্যাংককেও আমরা নিয়ে আসবো। তবে এটাতে একটু সময় লাগবে। তবে ইভেন্চ্যুয়ালি আমরা তাদেরও নিয়ে আসবো। বাকী চারটা আমরা সেপ্টেম্বরে মধ্যে তালিকাভুক্ত করে ফেলবো। এ কাজগুলো হয়তো দুই পর্যায়ে হতে পারে। আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কাজগুলো করতে চাই।
সরকারি ব্যাংকগুলোকে পুনঃঅর্থায়ন করা হবে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এই বছরের মধ্যে সব ভালো কাজ করতে চাই। প্রতিটা ব্যাংক লাভজনক অবস্থানে আছে। তাই পুনঃঅর্থায়নের প্রয়োজন নেই। আমরা এবছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পুনঃ অর্থায়ন করি নাই।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা আমরা ভালো ভাবেই জানি। আমাদের অর্থনীতি বছর শেষে আগের অর্থবছর থেকে কোনভাবেই খারাপ হবে না। এই প্রক্ষেপণগুলো আমাদের সব স্টেকহোল্ডাররা একই সুরে কথা বলেন। তারা মনে করেন আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮.২০ শতাংশ অর্জন করতে পারবো। আমাদের বাজেটও সে রকমভাবে প্রক্ষেপণ করেছি, আমি বিশ্বাস করি আমরা সেটা করতে পারবো। আমাদের মূল অর্থনীতির যে এলাকা সামষ্টিক অর্থনীতির হাত ধরে জিডিপি কোথায়ও দেখিনা যে আমাদের খারাপ সংকেত দিচ্ছে। তবে আমাদের একটি খাত নেগেটিভ আছে। এই একটি খাত দিয়ে সারা অর্থনীতি বিবেচনা করা যাবে না। প্রত্যেক দেশই অর্থনীতি সমভাবে চলে না। সব বিবেচনায় আমাদের অর্থনীতি ভালো।
কামাল বলেন, বাজার শক্তিশালী করতে সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে বাজার বাজারের মত থাকবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকার করে না। আমরা যদি কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখি এর উপকার পাবে জনগণ। বাজারে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসতে পারি এটা যাবে জনগণের কাছে। পাশাপশি সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম। যারা বিনিয়োগ করেন তারা ব্যক্তিগত। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম হলে কিছু সময় বাজারে ভলাটিলিটি (বিশৃঙ্খল) বেশি থাকে। এ কারণে বাজার কমে গেলে খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। আমরা এ মুহূর্তে অবকাঠামো খাতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছি। আমরা এখন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে চায়। অর্থনীতি যেখানে উঠানামা করে সেগুলোতে আমরা হাত দেবো। এজন্য আমাদের ব্যাংক-বিমা খাত দেখতে হবে। এগুলো ঠিক করতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো দূর করা হচ্ছে। আইনি কাঠামোতে সমস্যাগুলো দূর করছি। এনবিআর ও ব্যাংকিং খাত দেখার জন্য আদালতে আমরা দুটো ডেডিকেটেড বেঞ্চ পেয়েছি। যার ফলে আমাদের মামলার সংখ্যা কমে যাবে। অপরাধী অরপরাধ করলে মামলা করতে হবে এবং সেটার রায় দ্রুত হবে। এতে করে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
জিসিজি/এসএইচ