ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভরা মৌসুমেও সাগরে মিলছে না ‘কাঙ্ক্ষিত’ ইলিশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
ভরা মৌসুমেও সাগরে মিলছে না ‘কাঙ্ক্ষিত’ ইলিশ ফাইল ছবি

বরগুনা: ভাদ্র, আশ্বিন এই দুই মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। তবে বঙ্গোপসাগরে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ।

মাছ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে আর হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন উপকূলের জেলে পরিবারগুলো।  

জেলার পাথরঘাটায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) পরিচালক বলছে, গত ৪ বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত হারে ইলিশের পরিমাণ কমে এক তৃতীয়াংশে নেমে গেছে।  

এদিকে, আড়তদার-পাইকাররাও বলছেন, সাগরে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বেহাল দশায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে, ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে বরগুনার তিনটি নদী ও মোহনাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। বরগুনার পাথরঘাটায় দেশের দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কয়েক বছর আগেও ছিল ইলিশে সয়লাব। পাইকার-আড়তদার আসতেন বিভিন্ন জেলা থেকে। সে সময় সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত মৎস্য ব্যবসায়ীদের কেনা-বেচায় মুখরিত এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পা ফেলার জায়গাও ছিল না।

স্থানীয় জেলেরা জানান, ৮-১০ জন করে জেলের দল সাগরে যান। যে পরিমাণ ইলিশ পান, তা বিক্রি করে ট্রলার ও তেলের খরচের পর ৩০০-৪০০ টাকা থাকে। যা দিয়ে পরিবারের বাজারই হয় না। তবে ৪ বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের চিত্র।

এখন আর ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন না কেউই। কিছু কিছু জেলেরা খুব কম পরিমাণ ইলিশ নিয়ে এলেও বেশির ভাগ ট্রলারই থাকে ইলিশ শূন্য।

সোবাহান শিকদার নামে এক ট্রলার মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, অনেকে এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। সেই ঋণে টাকা ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে পরিশোধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনাও শোধ করতে পারছি না আমরা।

আরেক জেলে মতি মুন্সি বলেন, সাগরে মাছের দেখা মেলেনি। যে মাছ পেয়েছি তাতে খরচের টাকাই ওঠেনি। এতে দৈনিক খরচের তুলনায় আয় না হওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।  

জেলা মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩৭৭৫ দশমিক ০১ মেট্রিক টন ইলিশ উঠেছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭০০ মেট্রিক টন কমে গিয়ে ইলিশ উঠেছে ৩০২১ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১০০ মেট্রিক টন কমে গিয়ে ইলিশ উঠেছে ২৯১১ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ হাজার ৭৫৯ মেট্রিক টন কমে গিয়ে ইলিশ উঠেছে ১১৫২ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও এবছর ভরা মৌসুমে দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষেও সমুদ্রে ইলিশের দেখা মিলছে না। সরকারি গবেষণায় ইলিশ সম্পদের বৃদ্ধি দেখালেও বাস্তবে ইলিশ শূন্য দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর।  

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পরিচালক নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত হারে কমে গেছে ইলিশের পরিমাণ। সাগরে ইলিশ না পাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরছেন কিছু অসাধু জেলেরা। এতে মারা যাচ্ছে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাংলানিউজকে জানান, মৌসুমে সাগর থেকে ইলিশ নদ-নদীতে বিচরণ করতে আসে। বরগুনা উপকূলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত, এদের মধ্যে ইলিশ ধরেন প্রায় ৮০ হাজার জেলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।