ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালের দাম ৩-৪ টাকা কমেছে, আরও কমবে

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২
চালের দাম ৩-৪ টাকা কমেছে, আরও কমবে

ঢাকা: চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।  ফলে বাজারে মোটা চিকন সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে।

সপ্তাহ ব্যবধানে চিকনের থেকে মোটা চালের দাম বেশি কমেছে।  একই সঙ্গে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হয়েছে।  ফলে কয়েক দিনের মধ্যে চালের দাম আরো কমে যাবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৭ থেকে ৭২ টাকা। নাজিরশাইল চাল ৭২ থেকে ৮২ টাকা, পাইজাম বা হাস্কি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, আটাশ চাল ৫৬ থেকে ৬২ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৫১ টাকা ও হাইব্রিড মোটা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পাইকারি বাজারে চিকন চাল প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৭২ টাকায়। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি মানের প্রতিকেজি আটাশ নম্বর প্রতিকেজি চাল ৫১ থেকে ৫৩ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৩ থেকে ৫৭ টাকা।  হাস্কি চাল প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। মোটা চাল প্রতি কেজি পাইজাম ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৩ টাকা এবং স্বর্ণা মানভেদে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।  

প্রসঙ্গত, ২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, চাল আমদানিতে এখন রেগুলেটরি ডিউটি বা আবগারি শুল্ক ৫ শতাংশ, আগাম আয়কর ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশসহ মোট ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হবে। আর এই আদেশ আটোমেটেড চাল ছাড়া সব ধরনের চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে আমদানির আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অনুমোদন নিতে হবে। এর আগে চালে শুল্ক-কর মিলিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য ছিল। যা কমে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হলো। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

এবিষয়ে বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রশিদ রাইস এজেন্সির মালিক আব্দুল রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমদানি শুল্ক কমাতে মোটা চিকন সব রকমের চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে। চিকন চালের থেকে মোটা চালের দাম বেশি কমেছে।  তবে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বেচা বিক্রিও কমেছে। বর্তমানে আমরা দেশি চাল বিক্রি করছি। আমদানিকৃত চালও বাজারে এসেছে। কিন্তু আমতানিকৃত চালের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হয়। এজন্য দেশি চাল বিক্রি করছি। আশা করছি আমদানি যখন আরো বেড়ে যাবে তখন হয়তো আরো একটু দাম কমতে পারে।  

বাবুবাজারের জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির মালিক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে চালে ব্যবসায় লাভ নেই। আগে বাবুবাজার ও বাদামতলী চালের আরতে ৩০০ ঘর ছিল এখন সেখানে ১১৫ টি হয়েছে। চালের দাম এখন একটু কম। ৫০ কেজির মোটা ও চিকন চালের বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দাম কমে কোনো লাভ হয় নাই। কাস্টমার কমে গেছে। তারা মনে করছেন সামনে যদি আরো কমে। তবে আমদানি ব্যাপকহারে হলে চালের দাম সামনে আরো কমবে। যদি আমদানি এরকম থাকে তাহলে অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হবে না।  

রায়সাহেব বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা হাছান বাংলানিউজকে বলেন, চালের দাম কমতির দিকে। আড়তে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা দাম কমেছে। এরসঙ্গে লেবার ও পরিবহন খরচ ধরে আমরা দাম নির্ধারণ করি। ফলে মানভেদে খুচরায় চিকন চাল ১ থেকে ২ টাকা এবং মোটা চাল ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে।  

সূত্রাপুর বাজারের আদনান রাইস এজেন্সির ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দিন পর চালের বাজার কমতে শুরু করেছে। আর আমদানিও যেভাবে হচ্ছে সেটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সামনে চালের দাম আরো কমে যাবে। এখন ক্রেতা ও বিক্রেতা সবার মনে একটু স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকার যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত মানে আমদানি শুল্ক না কমাতো তাহলে চালের দাম আরো বেড়ে যেত।  

এদিকে রোবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাশিয়া, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এ ভিয়েতনাম এই ৫ দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব দেশ থেকে চাল আসছে।  এর বাইরে আরো দুই একটি জায়গা থেকে খাদ্য কেনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বর থেকে আমরা যে চিন্তা করছি একটা খাদ্য সংকট হতে পারে বিশ্বব্যাপী। তবে আমাদের ওয়ার্ক অর্ডার এবং খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা এসেছে।  

বর্তমানে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্য শস্য মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ খাদ্য আমাদের গোডাউন থেকে যাবে, সে পরিমাণ খাদ্য এবং সেফটির জন্য আরও কেনার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কারণে বাজারে চালের দাম ৪-৫ টাকা কমেছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বাংলাদেশ সময় ১৪৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
জিসিজি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।