ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানির গতিশীলতা চান বিনিয়োগকারীরা

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানির গতিশীলতা চান বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের জুলাই মাসে সূচকের টানা পতনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। তবে সেই সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয়।

এতে করে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট কাটতে শুরু করে। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণে লেনদেনেও গতি ফিরেছে পুঁজিবাজারে।

তবে বাজারে লেনদেনের গতির সঙ্গে কোম্পানির গতিশীলতা চান বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির ট্রেড ভলিউম ভালো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সব কোম্পানির দিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নজর দারি আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে একদিনে ২৮৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। মাস দুয়েক আগেও গড় লেনদেন ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা ছিল। লেনদেনের এমন গতি বাজারের জন্য ইতিবাচক। তবে লেনদেনের গতির পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোকেও গতিশীল করতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বাংলানিউজকে বলেন, ফান্ডামেন্টাল ১৭০ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে আটকে পড়ে আছে। ওভারঅল এটা বাজারের জন্য ঠিক না। বাজারে যেভাবে লেনদেন বাড়ছে এটা আশাব্যঞ্জক। কিছু নির্দিষ্ট কোম্পানির কারণে ট্রেড ভলিউম বাড়ছে। ট্রেড ভলিউম বাড়ার কারণে আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। তবে ফ্লোরে প্রাইসে আটকে থাকা ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো ১৭০ কোম্পানির দিকে বিএসইসির নজরদারি বাড়াতে হবে। এই সকল কোম্পানিকে গতিশীল করতে হবে। বিশেষ করে কোনো ধরনের অনিয়ম করে ফ্লোরে আটকে আছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে।

ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি আরও দুই বছর থাকুক এটাই আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা। তবে কিছু ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি রয়েছে যাদের ইপিএস ভালো, এনএভি ভালো অথচ ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এসব কোম্পানির দিকে বিএসইসির মনিটরিং বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, একটি ‘এ’ ক্যাটাগরির ভালো কোম্পানির শেয়ার ২০৯ টাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। অথচ এই কোম্পানি ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে, ইপিএস এবং এনএভি অনেক ভালো। এই কোম্পানির শেয়ার কোনো মতেই ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কথা নয়। অন্যদিকে কিছু কোম্পানির ইপিএস এবং এনএভি ভালো না অথচ এসব কোম্পানি শেয়ার গ্যাম্বলিংয়ের কারণে অতিমূল্যায়িত হচ্ছে। অথচ এগুলো ফ্লোরে থাকা উচিত নয়। তাই এসব কোম্পানি দিকে বিএসইসির নজরদারি বাড়াতে হবে। শুধু তাই নয় প্রয়োজন হলে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমিয়ে ফ্লোরে নিয়ে আসতে হবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ধারাবাহিক পতনে ফোর্স সেলের প্রেসার ছিল। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তাই ফোর্স সেল বন্ধ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কমিশন শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও বিশ্বাস আসে শেয়ারের দাম একটি সীমার নিচে আর কমতে পারবে না। এটা বাজারের জন্য ইতিবাচক হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে সব সময় বিএসইসি নজরদারি করছে। কোনো শেয়ার শুধু বাড়ছে বা কমার ক্ষেত্রে কতটুকু কমছে অথবা কেউ কোনো ইনসাইডার ট্রেডিং করছে কিনা, সব কিছুই বিএসইসি নজরদারি করছে। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নানা অনিয়ম নিয়ে কাজ করছে কমিশন। শুধু তাই নয়, আমাদের অফলাইন সার্ভিলেন্সকে শক্তিশালী করা হয়েছে। সব সময়ই আমরা বিনিয়োগকারীদের প্রটেকশন দিতে চাই।

চলতি বছরের ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারের চলমান সংকটে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয় বিএসইসি।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, শেষ ৫ কার্যদিবসের (রোববার-বৃহস্পতিবার) ক্লোজিং প্রাইসের গড় দর হবে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস। এর উপরে সিকিউরিটিজের দর স্বাভাবিক হারে ওঠানামা করতে পারবে। ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। তবে কোম্পানির বোনাস শেয়ার বা রাইট শেয়ারের কারণে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজের দর সমন্বয় হবে।

নতুন শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রথম দিনের লেনদেনের ক্লোজিং প্রাইসকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনার বাইরে থাকবে এসএমই বোর্ড। অর্থাৎ এসএমইতে বিদ্যমান নিয়মে ওঠানামা করবে।

এর আগে ২০২০ সালে দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে ওই বছরের ১৯ মার্চ সেই সময়ের কমিশন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়।

এরপরে ৩ ধাপে বর্তমান কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল। প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন। এরপরে ওই বছরের ৩ জুন ফ্লোর প্রাইসে থাকা বাকি ৩০ কোম্পানি থেকে নির্দেশনাটি তুলে নেয় বিএসইসি। তৃতীয় ধাপে এসে ১৭ জুন পুঁজিবাজার থেকে পুরোপুরি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এসএমএকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।