রাবি: সান্ধ্য কোর্স বন্ধ ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। কিন্তু বন্ধ ক্যাম্পাসে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম যথারীতি চলছে।
আন্দোলন, হামলা-মামলার ঘটনার পর বন্ধ ক্যাম্পাসে সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। দফা দফায় সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত হন শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী। ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনে। ওই ঘটনার পর রাতেই সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠক থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আবাসিকহলগুলো ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ সূত্রে জানা যায়, অনুষদের অধীনে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সান্ধ্যকোর্সের চারটি সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে।
সোমবার থেকে ওই বিভাগের ২০১৪ বর্ষের ১২তম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু সামা সরকার জানান, নতুন ব্যাচের মৌখিক পরীক্ষা সোমবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে। মৌখিক পরীক্ষায় যারা টিকবে তারা সোমবার থেকে ভর্তি হতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি কাস শুরু হবে।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে সান্ধ্য কোর্সের নতুন ১২তম ব্যাচের গত ৩১ জানুয়ারি উদ্বোধনী ক্লাস হয়। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এখন
নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে।
হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, ‘এটা নিয়মিত কোনো কোর্স নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বাহিরে তাই ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ’
আইন বিভাগে দুই বছর মেয়াদি সান্ধ্যকালীন এলএলএম কোর্সের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ভর্তির শেষ দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি বলে জানান বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আখতারুজ্জামান।
অন্যদিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে সাতটি বিভাগে চালুকৃত সান্ধ্যকোর্সের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। তবে ওই অনুষদের অধীনে কাস কবে থেকে শুরু হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি জানান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আনসার উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্ট্যাডিজ অনুষদ ও আইন অনুষদে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কার্যক্রম চালু রয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদেও কোর্সটি চালু করতে যাওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংগঠক উৎসব মোসাদ্দেক বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে সান্ধ্য কোর্সের কার্যক্রম চালু রাখা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাণিজিকীকরণের মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ’
তিনি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ক্যাম্পাস দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ থাকলে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া যায় না। তবে প্রশাসনের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরাতো চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা থাকুক। সকলের ক্লাস চলুক। আমরা শ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪