ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আলো ছড়াচ্ছে বান্দরবানের অনলাইন স্কুল

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪
আলো ছড়াচ্ছে বান্দরবানের অনলাইন স্কুল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান থেকে: পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দাঁতভাঙাপাড়ার বাসিন্দা মাধবী তঞ্চঙ্গা। তার স্বামী ওয়ারিং তঞ্চঙ্গা সামান্য মুদী দোকানি।

তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তার সংসারই চলে না। এরপর সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর কথা চিন্তা করা তার কাছে অকল্পনীয়।

মাধবীর সেই অকল্পনীয় বিষয়টিই এখন বাস্তব। তার ছেলে সুপংকর তঞ্চঙ্গা এখন স্কুলে যায়। তাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। দুর্গম এই পার্বত্য জেলায় বসেই ঢাকার শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানের অনলাইনে ক্লাস করছেন সুপংকরে মতো আরো ৪০ শিশু।

আর এই অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করেছে দেশের বৃহৎ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বান্দরবানের সদর উপজেলার কানাপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই অনলাইন স্কুল।
 
দেশের প্রচলিত শিক্ষার বাইরে ব্যতিক্রম এই অনলাইন স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতি। যে বিষয়ই শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন তার ছবি সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশন স্ক্রিনে ভেসে।

রোববার সরেজমিনে এই স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ঢুকে দেখা যায়, ঢাকা থেকে শিক্ষক পড়াচ্ছেন ড্যান্স। সঙ্গে সঙ্গে টিভি স্ক্রিনে নাচের ছবি ভেসে উঠছে। পড়ানো হচ্ছে অ্যাপেল। যথারীতি এবার আপেলের ছবি টিভি স্ক্রিনে। ৪ থেকে ৬ বছরের বয়সী এই ৪০ শিশু ছবি দেখে দ্রুতই সব রপ্ত করে ফেলছে। স্কুলে শিশুদের কোথাও সমস্যা হলে তা বুঝতে সাহায্য করছেন স্থানীয় সহকারী শিক্ষক সুখনন্দা তঞ্চঙ্গা।   

কানাপাড়া ছাড়াও মেঘলা, ডলুঝিরিপাড়া, বোমপাড়া, দাঁতভাঙাপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের  সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাই এই স্কুলের পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
 
আদিবাসী তঞ্চঙ্গা, বোম, ত্রিপুরা ছাড়াও এই স্কুলের বাঙালি শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। জাগো ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গ্রামীণফোন গত বছরের নভেম্বরে এই স্কুল চালু করেন।

বান্দরবান ছাড়াও গাজীপুর, রাজশাহী, গাইবান্ধা, মাদারীপুরে আরো চারটি অনলাইন স্কুল পরিচালনা করছে গ্রামীণফোন।  
 
শিক্ষার পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন পুষ্টিকর খাবার, ও হাইজিন প্রডাক্ট, ইউনিফর্ম, ব্যাগ, জুতা, বই খাতা সরবরাহ করে থাকে গ্রামীণফোন।

এই এলাকার আশপাশে স্কুল নেই। ওই চিন্তা থেকেই গ্রামীণফোন এখানে অনলাইন স্কুলর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। প্লে গ্রুপের এই ৪০ শিশু এক বছর পর কেজি ওয়ানে উন্নীত হবে। তখন প্লে গ্রুপে আরো ৪০ শিশু ভর্তির সুযোগ পাবে এই অনলাইন স্কুলে। তবে ইংরেজির পাশপাশি বাংলাও শেখানো হচ্ছে শির্ক্ষাথীদের।
  
রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য ছাড়াও গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিচালক লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন, গ্রামীণফোনের হেড কর্পোরেট কমিউনিকেশন তাহমিদ আজিজুল হকসহ গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।