রাজশাহী: পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও দারিদ্র্য রাজশাহী অঞ্চলে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার মূল কারণ। শহরের শিশুরা স্কুলে গেলেও জেলার দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার সব শিশু স্কুলে যেতে পারে না।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় সু-শাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় শতকরা ৭৫ ভাগ অভিভাবক দারিদ্র্যকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মূল কারণ হিসেবে মনে করেন।
২০১০ সাল থেকে ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্প অনেকটা নীরবেই পাল্টে দিয়েছে দেশের অনেক উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। কার্যক্রমটি শুরুর পর থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্কুল এলাকায় শিশুদের মধ্যে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে শিশুরা দল বেঁধে প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে শিক্ষার হার ও গুণগত মানও ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে। আর কমছে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হারও।
কিন্তু রাজশাহীর প্রত্যন্ত এ উপজেলার কোনো স্কুলে এখনও ফিডিং প্রোগ্রাম চালু হয়নি বলে অভিভাবক ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩২ ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে, তাদের শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন। ৯৩ ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে, স্কুলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। গবেষণা এলাকার ৮৮ ভাগ স্কুলে টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। তার মধ্যে ৬৫ ভাগ স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশুদের জন্য এ সুবিধা রয়েছে মাত্র ১০ ভাগ স্কুলে। এর জন্য এমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ কম।
এ অঞ্চলের ৭৫ ভাগ শিক্ষক মনে করেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমাতে তারা ক্লাসে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেন। ক্লাস নেওয়ার আগে পাঠ পরিকল্পনা করেন। ৩৮ ভাগ শিক্ষক চারটির অধিক ক্লাস নেন। এছাড়া, ৩৫ ভাগ শিক্ষক উৎসাহিত করায় ৮৫ ভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানদের জন্য সহপাঠ্য বই কিনে দেন।
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ ভাগ মনে করেন, উপবৃত্তি শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
দারিদ্র্যই প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মূল কারণ বলে মনে করেন ৭৫ ভাগ অভিভাবক। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ফিডিং প্রোগ্রাম চালু, শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সব শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি স্কুলে খেলাধূলা, আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে, প্রতিবেদনে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণগুলোর মধ্যে বাল্য বিয়ের কথা উল্লেখ না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এটি অন্যতম একটি কারণ। দারিদ্র্যের কবলে পড়ে প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরুতেই অভিভাবকরা তাদের মেয়ে শিশুদের বিয়ে দিয়ে দেন।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করতে হলে সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫