ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিকে উপবৃত্তি পায় ৮২ ভাগ শিক্ষার্থী

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫
প্রাথমিকে উপবৃত্তি পায় ৮২ ভাগ শিক্ষার্থী ছবি : সংগৃহীত

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৮২ জন উপবৃত্তি পায়। ৭৮ ভাগ শিক্ষার্থী নোটবই  কিনে, এদের ৬০ ভাগ মনে করে নোটবই ভালো ফলাফলের জন্য সহায়ক।



সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) কর্তৃক পরিচালিত সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলার শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

‘শিক্ষা মানব উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি’ স্লোগানে রাজবাড়ীতে সুপ্রের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবী বহুমূখী উন্নয়ন মহিলা সমিতি এ জরিপকাজ সম্পন্ন করে।

মোট ৫টি বিষয়ের উপর এ জরিপ পরিচালিত হয়। বিষয়গুলো হলো, সরকারি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সীমাবদ্ধতা, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মনিটরিং ভিজিটের প্রয়োজনীয়তা, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা ও কর্মমান, সাধারন জনগণের সচেতনতা ও সেবা বিষয়ে জনমত তৈরি এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি করা।

এ জরিপের জন্য সদর উপজেলার দুইটি এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার দুইটি বিদ্যালয়, মোট ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়।

২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত এ চার স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনার কমিটির সদস্যদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়। অংশগ্রহনমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে জরিপের তথ্য  ব্যবহার করে গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।

জরিপ ও গবেষণার জন্য সংশ্লিষ্টরা ওই চার স্কুলের শিক্ষার গুণগত ও সংখ্যাগত অবস্থা, শিক্ষা সমাপনী, উপবৃত্তি, মিড-ডে মিল, বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা, জনবল, স্কুল পর্যায়ে সরকারের বাজেট বরাদ্দ, বরাদ্দকৃত বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা কাঠামো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।

তথ্যে সংগ্রহের জন্য সুপ্র জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলার সব উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, প্রতিটি বিদ্যালয়ের তিনজন প্রধান শিক্ষক ও অপর এক নারী ও এক পুরুষ শিক্ষক, প্রতিটি বিদ্যালয়ের ৫ ছাত্র ও ৫ ছাত্রী, ৫ জন অভিভাবক এবং  ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও একজন সদস্যের সাক্ষাৎকার নেয়।

সুপ্রর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাক্ষাৎকার দেওয়া ৪০ শিক্ষাথীর মধ্যে শতকরা ৫৭ দশমিক ৫ জন মেয়ে। তারা জানায়, স্কুলে বই বিতরণের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই। ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে তারা জানুয়ারি মাসেই বই পেয়েছে, তবে ৫ ভাগ শিক্ষার্থী জানায় বই পেতে তাদের কিছু অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।

জরিপে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৮২ জন উপবৃত্তি পায়। ৭৮ জন শিক্ষার্থী নোটবই কিনেছে। এদের মধ্যে ১২ ভাগের দাবি শিক্ষকরা তাদের নোটবই কিনতে উৎসাহ দিয়েছে। তবে ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী জানায়, নোটবই তাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও ভালো ফলাফলে সহায়তা করছে।

জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষর্থীদের ৪৫ ভাগই কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। তবে এদের ৩৮ ভাগ শিক্ষার্থীই কোচিং করে নিজ নিজ স্কুলে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশিরভাগ শিক্ষকই ক্লাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। শতকরা ৭৫ ভাগ শিক্ষক ৪টির বেশি ক্লাস নেন।

শিক্ষার্থীদের মতে, শতকরা ৯৭ জনের বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব ২ কিলোমিটারের মধ্যে। ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর দাবি, স্কুলে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।

এদিকে, জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলোর ৫৫ ভাগ স্কুলেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। ৫০ ভাগ স্কুলে টয়লেট আছে। এরমধ্যে ৩২ ভাগ স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। আর মাত্র ৫ ভাগ স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ব্যবস্থা আছে।

জরিপকালে মোট ১২ জন শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতকোত্তর। এদের ২৫ ভাগ ছিলেন প্রধান শিক্ষক ও ৮৩ ভাগ নিয়মিত শিক্ষক।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫৮ ভাগ শিক্ষক বলেছেন, তাদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র আছে, যেটি তারা স্কুলের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে রাখেন। ৩৩ ভাগ শিক্ষক বলেছেন তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি অধিক মনোযোগ দেন। এছাড়া ৬৭ ভাগ শিক্ষক স্কুলের বাইরে কোচিং করান বলে জানান।

সাক্ষাৎকারে ৭৫ ভাগ অভিভাবক বলেছেন, তারা সন্তানদের জন্য নোটবই কেনেন। ৪৫ ভাগ অভিভাবক মনে করেন নোটবই পড়াশোনা ও ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির ৭৫ দশমিক ৯ ভাগ মনে করেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক স্কুলগুলোতে নেই। ৭২ দশমিক ৪ ভাগ বলেছেন, শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি করা দরকার।

তাদের মধ্যে ৮৬ দশমিক ২ ভাগ বলেছেন উপবৃত্তি শিক্ষার মনোন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ৮২ দশমিক ৮ ভাগ বলেছেন স্কুলে ফিডিং কার্যক্রম নেই। আর ৫৮ দশমিক ৬ ভাগ স্বীকার করেছেন স্কুল কমিটির সভা নিয়মিত হয় না।

জরিপের প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে, স্কুলের কোচিংয়ে শিশু ও অভিভাবকদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। বেশিরভাগ স্কুলেই পাঠ্যবইয়ের বাইরে চারু-কারু ও অন্যান্য বিষয়ে পড়ানো হয় না। স্কুলগুলোতে খাবার পানি ও আলো বাতাসের ব্যবস্থা মোটামুটি হলেও শৌচাগার মানসম্মত নয়। শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস নিলেও পাঠ পরিকল্পনা নিয়ে তাদের অধিকাংশই অমনোযোগী।

জেলার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সুপ্র বেশকিছু সুপারিশও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি সুযোগ-সুবিধার  সঠিক বাস্তবায়নের ফলোআপ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান, প্রাথমিক শিক্ষার হার শতভাগ নিশ্চিতে ও মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়দের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।