ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্নব্যাংকে প্রশ্ন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাছাই হয়ে পরীক্ষা

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
প্রশ্নব্যাংকে প্রশ্ন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাছাই হয়ে পরীক্ষা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সময়, ব্যয়, শ্রম ও কষ্ট লাঘব এবং সর্বোপরি প্রশ্নফাঁস রোধে ‘পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ প্রবর্তন করে পাবলিক, চাকরির পরীক্ষাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ও অন্য পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি-এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা, জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষাগুলো এ পদ্ধতির আওতায় আসবে।



পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে অসংখ্য প্রশ্নের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রশ্ন বাছাই করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর এ সবকিছুই হবে ডিজটাল পদ্ধতিতে।

সম্প্রতি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে সমালোচনার মুখে এসব চিন্তা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে পাবলিক পরীক্ষায় ‘একজাম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ তথা পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রয়োগ করা হবে।

চলতি বছরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্নফাঁস এড়ানো ও খরচ বাঁচাতে এ উদ্যোগে সাফল্য পাওয়া গেছে। আগামী ২৮ আগস্ট ১৭ জেলায় একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে।  

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে ১০ সেট প্রশ্ন তৈরি করে তা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওয়ানটাইম পার্সওয়ার্ড দিয়ে পরীক্ষার তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিসে পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পৃথক দু’টি পাসওয়ার্ড ও ডিজিটাল সাইন দিয়ে তা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা হয় আইপি প্রিন্টারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ডিজিটাল পদ্ধতি তথা স্মার্ট পদ্ধতি নিয়ে এক সেমিনারে এসব বিষয় নিয়ে ধারণা দেন বুয়েটের শিক্ষক-প্রকৌশলীরা। সেমিনারে পরীক্ষা গ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থা-বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে এ সংক্রান্ত একটি সেল গঠনের প্রস্তাব আসে।

এ নিয়ে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে ক্রিটিক্যাল সিস্টেমের দিকেই যেতে হবে। এজন্য ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রশ্নব্যাংক হবে, আর সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রশ্ন বাছাই হয়ে প্রশ্ন সেট তৈরি হবে। বর্তমানে স্কুলের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নগুলো শিক্ষক সমিতি থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে।

শিক্ষাসচিব বলেন, শিক্ষক-ছাত্ররা প্রশ্ন তৈরি করে তা এডিটরিয়াল বোর্ডে জমা দেবেন। এজন্য তাদের প্রশিক্ষিত করা হবে। আর পাবলিক পরীক্ষার জন্য একটি প্রশ্নব্যাংক থাকবে।

সনাতন পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি করে বিজি প্রেসে প্রিন্ট করে ট্রাঙ্কে ভরে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ দিয়ে জেলায় পাঠানো হয়। কেবল বিজি প্রেসেই প্রশ্ন ছাপানোর কাজে দুই শতাধিক লোকবল জড়িত থাকে।

প্রশ্নব্যাংক থেকে প্রশ্ন সংগ্রহের জন্য পরীক্ষার কেন্দ্রে দু’টি করে আইপি প্রিন্টার থাকবে, প্রশ্ন ইনক্রিপশন (হিজিবিজি) করা থাকবে। প্রিন্ট ছাড়া তা স্পস্ট হবে না। এতে দেখারও সুযোগ নেই। আর এক ঘণ্টা আগে ছাপা হবে প্রশ্ন। এ পদ্ধতিতে সময়, শ্রম, কষ্ট ও পরিবহন নিয়ে কোনো জটিলতা থাকবে না বলে মনে করেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান।

এছাড়া এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিয়োগের মতো পরীক্ষাগুলো শেয়ারিং রিসোর্সের মাধ্যমে নেওয়া হবে।

একইভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিতে নিজস্ব একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়ন করবে বলে জানান শিক্ষাসচিব।

প্রাথমিকের সমাপনীসহ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য এ পদ্ধতির প্রয়োগ করা হবে। অবশ্য ইতোমধ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এতে একটি প্রশ্নব্যাংকে ৮০ হাজারের উপরে প্রশ্ন রাখা হয়। সেখান থেকে ৮০টি প্রশ্ন বাছাই হয়ে চলে আসে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক।

শিক্ষাসচিব বলেন, পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রয়োগে প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি মোকাবেলার পাশাপাশি কম খরচ, সময় ও কষ্ট লাঘব হবে। শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এসব পদ্ধতিতে যেতে হবে বলে জানান নজরুল ইসলাম খান।

এছাড়া সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতায় বিভিন্ন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য জেলা বা উপজেলায় প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন সংগ্রহের জন্য প্রিন্ট করে নিতে পারবে।

প্রশ্নফাঁস রোধে ডিজিটাল পদ্ধতি সঠিকভাবে কাজ করবে বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার।

প্রশ্ন প্রণয়ন, বাছাই, ছাপানো ও বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ করা যেতে পারে জানিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এসব কাজের জন্য প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিকে যুক্ত করা প্রয়োজন।

কারণ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বিষয়গুলোর সমাধান ইন্ডাস্ট্রি থেকেই আসতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
এমআইএইচ/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।