ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক সমাপনীর শেষ এক ঘণ্টায় অরাজকতা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
প্রাথমিক সমাপনীর শেষ এক ঘণ্টায় অরাজকতা! ছবি: জি এম মুজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর মতো দেশের সব থেকে বড় পাবলিক পরীক্ষার ওপর পরিচালিত এক জারিপে দেখা গেছে, শেষ ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পরীক্ষার হলে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় পরীক্ষার্থীরা একে অপরের প্রশ্নে উত্তর মেলানো এবং দেখে লেখালেখি করেন।



আর এই পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কোচিং, অতিরিক্ত ক্লাসে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ হয়।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে?- শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গণস্বাক্ষরতা অভিযান এই পরীক্ষার প্রশ্ন তুলে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের সুপারিশ দিয়েছে।

ভবিষ্যতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি-না এমন প্রশ্নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আরও আলাপ- আলোচনা প্রয়োজন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বুধবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তেন বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযান তাদের ২০১৪ সালের ‘এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট’ প্রকাশ করে, যাতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়েও গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

দেশের ১৫০টি উপজেলা, থানা, পৌরসভার ৫৭৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর গবেষণা পরিচালনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণস্বাক্ষরতা অভিযান।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০-৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অপরের সাহায্য ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছে। তবে যাদের প্রয়োজন ছিল তাদের জন্য সাহায্যে দ্বার উন্মুক্ত ছিল। পরিদর্শকরা মোবাইল ফোনে এসএমএস, ব্লাকবোর্ডে উত্তর লিখে দিয়েছিলেন। পরীক্ষার্থীরা নিজেরাও দেখাদেখির সুযোগ পান।

পাসের হার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক পরীক্ষার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যারা বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো করে না তাদের অভিভাবকের কাছে কোচিং করানোর জন্য প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিল। গত বছর ৮৬ দশমিক ৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে কোচিংয়ের আয়োজন ছিল।

গণস্বাক্ষরতা অভিযান, শ্রেণিকক্ষে শিখনে জোরদান, সমাপনী পরীক্ষার উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক চরিত্রে পরিবর্তন, সমাপনী পরীক্ষা জাতীয়ভাবে না করে স্থানীয়ভাবে আয়োজন, প্রশ্নপত্র প্রান্তিক যোগ্যতাভিত্তিক করার সুপারিশ করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, সমাপনী পরীক্ষার নামে ছোট ছোট ছাত্রদের দুর্নীতি শেখানো হচ্ছে। শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার বিষয়টি না থাকলেও কেনো নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণশিক্ষা মন্ত্রী প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে বলেন, এই পরীক্ষা বন্ধ হবে কি-না তা আরও আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। সমাপনী পরীক্ষা বন্ধ করতে হলে আগে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই গুণগত শিক্ষা, শিক্ষার মান ঠিক না থাকার জন্য শিক্ষকরাই দায়ী। শিক্ষকদের সব ধ্যান-ধারণা ক্লাসে মনোনিবেশের আহ্বান জানান মন্ত্রী।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সনদ দেওয়ার নামে প্রাথমিক সমাপনী নিয়ে বৈষম্য দূর করতে গিয়ে আরও বৈষম্য তৈরি করছি কি-না বিষয়টি দেখতে হবে।

শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।