ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষায় খরচ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
শিক্ষায় খরচ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ

ঢাকা: শিক্ষার জন্য ব্যয়কে খরচ নয়, বিনিয়োগ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষায় খরচ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়।

২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসে সেই ষড়যন্ত্র নির্মূল করে আমরা একটি উন্নত সমৃদ্ধ শিক্ষিত দেশ ও জাতি গড়ে তুলছি। জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার এ সংগ্রামে আমাদের মূল বিনিয়োগ হচ্ছে শিক্ষা। তাইতো ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় এসে নতুন শিক্ষীনীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে সরকারি স্কুল ও একটি করে সরকারি কলেজ করারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

রোববার (২২ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

‘দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০১৬’ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত জাতীয় পর্যায়ের সেরা ১২ জন এবং ২০১৫ সালের নির্বাচিত সেরা ১২ জন মেধাবীর হাতে পুরস্কার তুলে দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা গড়ে তুলতে থাকেন নানামুখী কার্যক্রমে। তার কার্যক্রমের মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছিল শিক্ষাখাত। তিনিই বলেছিলেন, ‘সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না’। শিক্ষায় বিনিয়োগ যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ, তাও আমাদের শিখিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু।

বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই কথাই মাথায় রেখে দেশের শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত অর্জন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ হতদরিদ্র ছিল, তাদের মুখে ভাত ছিল না, পরনে কাপড় ছিল না। নিজের অপরিসীম ত্যাগ দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বাঙালি জাতিকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ এনে দেন, তিনি জাতিকে এ দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বারবার আঘাত এসেছে, আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাঙালি জাতি। তাই বঙ্গবন্ধুর সেই অমর বাণী, বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখতে পারবে না- সেটিও সত্যে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছরে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশই গড়ে তোলেননি জাতির পিতা, একটি সংবিধানও উপহার দিয়েছিলেন। সেই সংবিধানে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও জাতীয়করণ করেন।

দেশের শিক্ষার্থীদের মেধার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি মেধাবী আমাদের ছেলে-মেয়েরা। অন্য দেশের ছেলেমেয়েদের দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে হাতে গুনতে হয়, আমাদের ছেলেমেয়েদের তা লাগে না। তাদের আলাদা ট্যালেন্ট আছে। তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। সেটা হতে পারে শিক্ষার বিস্তারের মধ্য দিয়ে, প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে। আমাদের দেশের মেধাবীদের খুঁজে বের করা ও পুরস্কৃত করা একটি মহৎ উদ্যোগ।

শিক্ষাই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি, বড় সম্পদ। এই সম্পদকে কেউ কেড়ে নিতে পারে না, এটা হারায় না। তাই মন দিয়ে পড়াশোনা করতে এবং দেশকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত হতে চাই না। আমরা সুশিক্ষিত উন্নত জাতিতে পরিণত হতে চাই। বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াবেই। আর এ কাজে আমাদের মূল শক্তি শিক্ষা ও আমাদের নতুন প্রজন্ম।

তিনি বলেন, জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। আজকের প্রজন্মই ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। এই শিক্ষার্থীরা সেই সোনার মানুষ, সেই সোনার টুকরা। তারাই সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন উদার করো, দেশ গড়ো, জাতি গড়ো।

প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম, নবম-দশম এবং উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অংশ নেয়।

চলতি বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে উপজেলা পর্যায়ে ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ মার্চ; জেলা পর্যায়ে ২২ মার্চ, ঢাকা মহানগরে ২৩ মার্চ, বিভাগীয় পর্যায়ে ২৪ মার্চ এবং জাতীয় পর্যায়ে ৩১ মার্চ সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা হয়।

কেবল জাতীয় পর্যায়ের সেরাদের নয়, প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজয়ীদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে।

এ বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলো- গণিত ও কম্পিউটার বিষয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি গ্রুপ: শ্বাশত সাহা, অষ্টম শ্রেণি রংপুর জিলা স্কুল; রংপুর বিভাগ। নবম থেকে দশম শ্রেণি গ্রুপ: শৌর্য দাশ, দশম শ্রেণি, কুমিল্লা জিলা স্কুল; চট্টগ্রাম বিভাগ। একাদশ থেকে দ্বাদশ গ্রুপ: শেখ আজিজুল হাকিম, একাদশ শ্রেণি, নটরডেম কলেজ; ঢাকা মহানগরী।

দৈনন্দিন বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান বিষয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি গ্রুপ: মো. মকলেসুর রহমান, অষ্টম শ্রেণি, আমেনা-বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দিনাজপুর; রংপুর বিভাগ। নবম থেকে দশম শ্রেণি গ্রুপ: শতাব্দী রায়, নবম শ্রেণি, জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়; রাজশাহী বিভাগ। একাদশ থেকে দ্বাদশ গ্রুপ: মাহিয়া আহমেদ, একাদশ শ্রেণি, সরকারি আযিযুল হক কলেজ, বগুড়া, রাজশাহী বিভাগ।

ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি গ্রুপ: নাহিয়ান ইসলাম ইনান, অষ্টম শ্রেণি, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ময়মনসিংহ বিভাগ। নবম থেকে দশম শ্রেণি গ্রুপ: সিরাতল মোস্তাকিম শ্রাবণী, দশম শ্রেণি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ; ঢাকা মহানগরী। একাদশ থেকে দ্বাদশ গ্রুপ: মৌমিতা রহমান ঈপ্সিতা, একাদশ শ্রেণি, লালমনিরহাট মহিমা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজ; রংপুর বিভাগ।

বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি গ্রুপ: মোতাকাব্বির বিন মোতাহার, সপ্তম শ্রেণি ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়; চট্টগ্রাম বিভাগ। নবম থেকে দশম শ্রেণি গ্রুপ: নাজমুস সাকিব, দশম শ্রেণি, কুমিল্লা জিলা স্কুল; চট্টগ্রাম বিভাগ। একাদশ থেকে দ্বাদশ গ্রুপ: ঐশ্বর্য সাহা উর্মি, একাদশ শ্রেণি, বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ; সিলেট বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬/আপডেট ১২৪২ ঘণ্টা
এমইউএম/টিআই/এইচএ/এএসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।