ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আজ শুধু স্বপ্ন বোনার দিন

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
আজ শুধু স্বপ্ন বোনার দিন ছবি: শাকিল আহমেদ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সকাল পৌনে ৯টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে পশ্চিম দিকে দীর্ঘ লাইন।

এ লাইনের সবাই ছাত্রী। তাদের হাতে ক্লিয়ার ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা প্রবেশপত্র। এটি দেখিয়েই ঢুকতে হবে পরীক্ষা কেন্দ্রে।
 
দীর্ঘ লাইন শেষ হয়েছে কলা ভবনের সামনে গিয়ে। ভবনের মূল ফটক তখনও খোলেনি। খুলবে সাড়ে ৯টায়। তার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। লাইন মিস করা চলবে না।
 
সুতরাং মাঝের এই সময়টুকু অপচয় না করে লাইনে দাঁড়িয়েই শেষবারের মত চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ও উত্তরের দিকে। স্বপ্নের সোনার হরিণ যে ধরতেই হবে! 
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের এই ‘উচাটন’ মুহূর্ত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালটাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
 
প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠ। স্বপ্ন বুনতে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক মেধা যাচাই পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়। শেষ হয় ১১টায়।
 
পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে ডাকসুর সিঁড়িতে বসে শেষ মূর্তের প্রস্তুতি সারছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মাহমুদা আক্তার। এসএসসিতে জিপিএ ৪.৪১ ও এইচএসসিতে ৪.৫০ পাওয়া মাহমুদা মনে করেন পরীক্ষা ঠিক মতো দিতে পারলে তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। আর যদি এখানে সুযোগ না পান, অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করবেন।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কথা হয় মো. শাহীন আলীর সঙ্গে। পঞ্চগড় থেকে আসা শাহীন আলম পড়েছেন মাদ্রাসায়। টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত থেকে আলিম পাস করা শাহীন আলী দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছেন ৪.১৩ এবং আলিম পরীক্ষায় পেয়েছেন ৪.০০। শাহীনেরও স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন তিনি। তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় ‘আইন’।  
শাহীন এবং মাহমুদা আক্তারের মতো ৩৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এভাবে ঢাবি ক্যাম্পাসে এসেছেন টুকরো টুকরো স্বপ্নের বীজ বোনার জন্য।
 
তবে তারা প্রত্যেকেই জানেন, ২ হাজার ২৪১টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষা দিচ্ছেন ৩৪ হাজার ৬০৬ জন। অর্থাৎ একটি আসনের জন্য লড়ছেন ১৫ জন করে শিক্ষার্থী। সুতরাং কাজটি সহজ নয়।  

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছি। স্বপ্ন পূরণ হলে ভালো। আর যদি পূরণ না হয়, অন্য জায়গা চেষ্টা করবো। ভেঙে পড়বো না। যেখানেই পড়ি, চেষ্টা করবো মানুষ হওয়ার।  
নরসিংদী থেকে পরীক্ষা দিতে আসা সুরভী রহমান অনু বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন প্রত্যেকেরই থাকে। কিন্ত সবার তো সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। তাই বলে তো আর থেমে থাকা যাবে না। চান্স পেলে ভাল। না পেলে আর কী করার?
 
এদিকে নবীনদের এই স্বপ্নযাত্রায় সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আলাদা আলাদ তথ্য কেন্দ্র খোলে। চারুকলাসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বেশ কয়েকটি তথ্য কেন্দ্র খুলে নবাগতদের সহযোগিতা করে ছাত্রলীগ। একইভাবে কলা ভবন, বিজনেস ফ্যাকাল্টি ও কার্জন হলের সামনে তিনটি তথ্য কেন্দ্র খুলে সেবা দেয় ছাত্র ইউনিয়ন ।
 
এছাড়া বিভিন্ন জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি আলাদা আলাদা তথ্যকেন্দ্র খুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। বিশেষ করে পরীক্ষা কেন্দ্রের অবস্থান ও কক্ষ নম্বর নিশ্চিত করে দেয় শিক্ষার্থীদের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
এজেড/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।