ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় নয়া কৌশলে পুনরায় সক্রিয় জালিয়াত চক্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় নয়া কৌশলে পুনরায় সক্রিয় জালিয়াত চক্র

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক জালিয়াত চক্র। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধে এ বছর প্রথম বারের মতো বারকোড পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত ‘খ’, ‘গ’ ও ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষা সফলতার সাথে সম্পন্ন হলেও থেমে নেই জালিয়াত চক্রের তৎপরতা।
 
বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষা শুরু হয় শুক্রবার (২১ অক্টোবর)। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে আটক করা হয় ১৩ ভর্তিচ্ছুকে। এমনকি আটককৃত এসব শিক্ষার্থীর দেয়া বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে একাধিক জালিয়াত চক্রের নাম।
 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে বারকোডে প্রণীত প্রশ্নপত্রের ধরণের সঙ্গে কৌশল মিলিয়ে নিতে একটু সময় লাগলেও পুনরায় সক্রিয় জালিয়াত চক্র। জালিয়াত চক্রের পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা খুবই উঁচু মানের। এই ধরনের জালিয়াতির ঘটনা আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জালিয়াত চক্র লেগেই আছে। এদের ডালপালা অনেক। আমাদেরও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা ৠাবের সাহায্যে এক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
 
গেল কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনকারী পরীক্ষার্থীরা খুদে বার্তার মাধ্যমে তার প্রশ্নপত্রের সেটকোড জানিয়ে দিত বাইরের চক্রের কাছে, যারা এই সেটকোডের সকল উত্তর পরীক্ষার্থীর কাছে খুদেবার্তার মাধ্যমে পাঠাতো। এজন্য এ বছর সেটকোড পদ্ধতি পরিবর্তন করে বারকোড অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। ‘খ’ ‘গ’ ও ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষায় এ পদ্ধতির সুফল মিললেও ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় পুনরায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠল।
 
জালিয়াত চক্রের নতুন কৌশল বিষয়ে ঢাবির এক শিক্ষক বলেন, প্রতারক চক্র আগে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে এর সঠিক উত্তরমালা ডিভাইসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠায়। আর শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সম্ভাব্য উত্তরের (অপশন) সাথে মিলিয়ে নিয়ে বৃত্ত ভরাট করে। কারণ একই সম্ভাব্য উত্তর (অপশন) দুই প্রশ্নে নেই।
 
জানা গেছে জালিয়াতির দায়ে আটক ১২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ জনই উদ্ভাসে কোচিং করেন। অন্যদের মধ্যে একজন ইউসিসি, একজন ইউনিএইডের শিক্ষার্থী। বাকি দুজন কোন কোচিংয়ে ভর্তি হননি।
 
ভর্তি জালিয়াতির দায়ে আটকদের দেয়া তথ্যে বেরিয়ে এসেছে একাধিক চক্রের নাম। এদের মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক চক্র ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতার নামও। আটককৃতদের ৩ জন তাদের সহযোগিতা করা চক্রের বিবরণ দিয়েছেন।
 
দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র ইসতিয়াক আহমেদ (ভর্তি রোল ৬৫৮৫৫৬) ডিভাইসসহ আটক হয়েছেন মোহামম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ কেন্দ্র থেকে। তিনি বলেন, আমার পরিচিত এক বড় ভাই রুবেল এর মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা শুভ ও সৌরভের সাথে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী আমাকে প্রশ্নের উত্তর এসএমএস পাঠায়। তিনি উদ্ভাস ফার্মগেট শাখায় কোচিং করে বলে জানান।
 
ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে আটক অবনী রায় (ভর্তি রোল ৬৮৮১৫০) কথাতেও বের হয়ে আসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতার নাম। তিনি বলেন, আমার সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মাসুম ভাইয়ের পাঁচলাখ টাকার চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী তিনি আমাকে ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর পাঠান।
 
ফেসবুক চক্রের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে জালিয়াতির আশ্রয় নেয় ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে আটক হওয়া ইমরান খান শোভন। তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ফেসবুকে ‘পলাশ আহমেদ’ নামে আইডির সাথে চুক্তি করেন।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাইরে না গেলে উত্তর পাঠানো সম্ভব নয়। পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক বলেন, পরীক্ষা শুরু সাত মিনিটের মাথায় শিক্ষার্থীদের হাতে উত্তর চলে আসার মানে হলো পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি দুইজনকে আটক করেছি যাদের পাঠানো উত্তর মিলে গেছে।
 
এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাইরে প্রশ্ন যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে অন্য কিছু যে হতে পারে না এটা বলার সুযোগ নেই। দেখা যাচ্ছে কোন কোন কেন্দ্রের নিম্ন পর্যায়ের কোন কর্মচারী অতিরিক্ত প্রশ্ন পাঠিয়ে দিতে পারে। এছাছাড়া প্রশ্ন নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া থাকে। তারা যদি দায়িত্বে অবহেলা করে থাকেন সেক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু থাকে না।
 
পরীক্ষায় এ ধরনের জালিয়াতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছি পরীক্ষায় জালিয়াতিকারীদের ভ্রাম্যমান আদালতের সামনে হাজির করা হবে। তাদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তিনি জালিয়াতি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন এবং এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী অভিভাবকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
এসকেবি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।