ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘পাস-ফেলের প্রচারে ক্ষতি শিক্ষার্থীদের’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
‘পাস-ফেলের প্রচারে ক্ষতি শিক্ষার্থীদের’

ঢাকা: ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বক্তব্যের উদাহরণ টেনে দেওয়া বক্তব্য কাউকে আহত করার জন্য দেননি বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্যই পাস-ফেলের খবর প্রচার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।


 
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কম পাস করায় শিক্ষার মান কমে যাওয়া নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তা মোটেই সঠিক নয় দাবি করে গত ২৬ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নীলক্ষেত থেকে বেনামি বই কিনে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়।
 
এ নিয়ে দু’দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য স্পস্ট করতে বলেন।
 
রোববার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা কেউ যেন ভুল না বুঝেন। আমি বলেছি, এটা পাস-ফেলের নয়।
 
একজন শিক্ষককে উদ্ধৃত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, তারা নীলক্ষেতে গিয়ে ফুটপাতে অনেক ধরনের বই বিক্রি হয় গান, জারি, নাচ, ছড়া, কবিতাসহ নানা ধরনের বই। ওইসব জায়গা থেকে, তারা নিজেরাও দেখেন নি এসব বই কয়েকটা কিনে নিয়ে আসেন, প্রশ্নের মধ্যে ওই বইয়ের লেখক কে, একটা প্রশ্ন দিলো। তারাও জানেন না কেউ। কেন দেন, তার তো উদ্দেশ্য পাস ফেল না, তার উদ্দেশ্য হলো ৩৯ জনকে বাদ দেওয়া এবং একজনকে রাখা। সেই হিসেবে এটা কোনো পাস ফেলের প্রশ্ন না, এটা নিয়ে বিভ্রান্তি হচ্ছে।
 
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক বিবৃতিতে জানায়, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি একটি পরীক্ষিত, স্বচ্ছ এবং ছাত্র-বান্ধব প্রক্রিয়া। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই বলেও দাবি করে শিক্ষক সমিতি।
 
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে পয়েন্টের উপর বলেছেন, আমার একটা উদাহণের খণ্ডিত অংশ নিয়ে বলেছেন। আমি বলেছিলাম, কথাটা চালু হয়ে যাচ্ছে যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় সবাই ফেল করে বা বেশিরভাগ ফেল করে। এটা আমি বলেছিলাম এটা পাস-ফেলের প্রশ্ন না। পাস-ফেলের প্রশ্ন এসএসসি-এইচএসসি। এখানে তার ভাষা, তার ব্যাখ্যা করা, তার বিশ্লেষণ করা, সৃজনশীলভাবে জিনিসটা লিখতে পারা, লিখতে পারছে কি না, ব্যাখা করে লিখতে পারছে কি না, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস সবকিছু নিয়েই মূল্যায়ন করা হয়। সেই পরীক্ষা প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে আর ওই পরীক্ষার এক ঘণ্টার। ওখানে শুধু টিক মার্ক দিয়ে উত্তর দেয়, বাছাই করা হয়, সেখানে কিন্তু পাস-ফেলের পরীক্ষা নয়, এটা একটা বাছাই পরীক্ষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসনে ৪০ জনের আবেদন পড়লে একজনকে বাছাই করে ৩৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়।
 
‘একটি সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইআয়ের একজন অধ্যাপক বলেছিলেন, প্রশ্ন কঠিন করার জন্য বিভিন্ন উদাহরণ নিয়ে আসা হয়। আমি কিন্তু ওটা উদাহরণ হিসেবে বলেছিলাম। এখন যদি ওই কথাটাও বলা হয় তাহলে উদাহণেরও একটা খণ্ডিত অংশ। তাই এটা কেউ যেন ভুল না বুঝেন। আমি বলেছি, এটা পাস-ফেলের নয়’।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি, যদি দেখা যায় পাসই করার যোগ্য না হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তো তাদের ভর্তি করা উচিত নয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা যখন বাইরে ভর্তি হতে যাবে তখন বলবে, তোমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করে না, বলে ফেল, তবে আমি কেন ভর্তি করব? যখন যে আমাদের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েও যাবে তখন বলবে- তুমি তো তোমার ওইসব পর্যায়গুলোতে পাস করার যোগ্যই না। আমাদের পরীক্ষা, ছেলেমেয়েদের যোগ্যতা ও তাদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন উঠেবে। এজন্যই বিষয়টি এভাবে প্রচার না করতে বলেছিলাম।
 
‘শিক্ষকরা শিক্ষা পরিবারের মাথার উপরে, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা যাই বলবেন সেটাকে মূল্য দেব, গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করব। আমি মনে করি বলতে পারেন, আমাকে ডেকে নিয়েও বলতে পারেন। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই কথাটা বাড়াতে চাই না’।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা, আমার কোনো ব্ক্তব্যে তারা যদি আহত বা ঠিক মনে না করেন অবশ্যই এ বিষয়ে আমি দুঃখিত। তারা আমাদের মাথার মনি, আমি কোনো প্রশ্নই করব না। তারা যা বলবেন তা গ্রহণ করব। এটা নিয়ে আমি কোনো প্রশ্ন তুলছি না, আমার ব্যাখ্যাটা আমি দিলাম। এটা উদাহরণের খণ্ডিত একটা অংশ।

**‘নীলক্ষেত থেকে বই কিনে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হয়’
**শিক্ষামন্ত্রীকে বক্তব্য স্পষ্ট করতে বললেন ঢাবি উপাচার্য
**শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
এমআইএইচ/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।