এ সংক্রান্ত অভিযোগ পত্রে লেখা হয়েছে, ওই প্রবন্ধের ৯৫ ভাগই তিনি চুরি করেছেন। বাংলানিউজের অনুসন্ধানেও এর সত্যতা মিলেছে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব পারসিয়া এন্ড উর্দু নামে বিভাগীয় গবেষণা জার্নালে ‘বাংলা কবিতায় ফার্সি ভাবধারা’ শিরোনামে ফার্সি ভাষায় প্রবন্ধটি লিখেন অধ্যাপক সাইফুল। জার্নালের ৩য় খণ্ড ২০০৬ সালের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) সংখ্যায় ৭৭ থেকে ৮২ নম্বর পৃষ্ঠায় এটি প্রকাশিত হয়।
একই শিরোনামে ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’ নামক গ্রন্থের ৪৮ থেকে ৬৩ নং পৃষ্ঠায় বাংলা ভাষায় এই প্রবন্ধটি লিখেন ছৈয়দ আহমদুল হক। অধ্যাপক সাইফুল কোন ধরনের সূত্র ছাড়াই এই প্রবন্ধটি বাংলা থেকে হুবহু অনুবাদ করেন ফার্সি ভাষায়।
বাংলানিউজের পক্ষ থেকে দুটি প্রবন্ধ সংগ্রহ করে দেখা যায়, জার্নালের ৭৭ নং পৃষ্ঠার ৪-৫ লাইন ছাড়া সবটুকু প্রবন্ধ বিচিত্রার ৪৮ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে কপি করা। এরপর ৭৮ নম্বর পৃষ্ঠা কপি করেছেন ৪৯ ও ৫৬ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে। সেখানে দেখা যায় বাংলায় লেখা শ্লোক- বিচ্ছেদের অনলে সদা অঙ্গ জ্বলে, বিনয় করিগো প্রিয় আয় আয়রে’ পুরোটা ইংরেজি বর্ণে লিখেছেন। এরপরে ৭৯ পৃষ্ঠার ৫০, ৫১ ও ৫৭ নং পৃষ্ঠা থেকে কপি করেছেন। এমনি করে ৮০ নম্বর পৃষ্ঠাও মূল গ্রন্থের ৫৩ ও ৫৪ নং পৃষ্ঠা থেকে নিয়েছেন।
পুরো প্রবন্ধটি মিলিয়ে দেখা যায়, তিনি বাংলা মূল অংশ কিছুটা বাদ দিয়েছেন। প্রথম পেজ এবং উপসংহারের তিন চার লাইন ছাড়া তিনি প্রবন্ধের ৯৫ ভাগ নকল করেছেন।
অভিযোগ আছে, দ্রুত পদোন্নতির জন্য এ ধরনের গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন শিক্ষকরা। কেএম সাইফুল ইসলাম খান অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভের ক্ষেত্রে এ প্রবন্ধটি দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দীন নামে অন্যের লেখা একটি বই নিজের নামে চালানোর অভিযোগ ওঠে। যেটি নিয়ে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, এটা পুরাতন বিষয়। এ বিষয়ে সিন্ডিকেট তদন্ত করছে।
এই গবেষণা জার্নালটির সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক ড. উম্মে সালমা। আর সহযোগী সম্পাদক হিসেব ছিলেন অধ্যাপক সাইফুল নিজেই। সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন ফার্সি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খান।
ফার্সি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে করা হয়। জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে আমার কাছে অভিযোগ আসে। পরে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চলে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, প্রবন্ধ চুরির অভিযোগটি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এর কাছে গেলে সিন্ডিকেট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর প্রধান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
এসকেবি/জেডএম