এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তাফা কামালের বক্তব্য, প্রয়োজনে অন্যত্র থেকে শিক্ষক এনে শিক্ষার্থী ভর্তি ও ক্লাশ শুরুর কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিবাদে যুক্ত দুটি পক্ষের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি পক্ষ মামলায় রায় পেয়েছে বলে শুনেছি, যদি তাতে সমস্যার সমাধান হয় তবে কোন সমস্যা নেই।
পাঠদান বন্ধ থাকায় অন্যের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত বিদ্যালয় ভবনের জরাজীর্ণ দশা কাটাতে অল্প সময়ের মধ্যেই উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আফসার উদ্দীনের নামে ১৯৭৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে বিদ্যালয়টি নিবন্ধিত হয়, ২০১৩ সালে জাতীয়করণও হয়ে যায়। তবে জাতীয়করণের আগে ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডি প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে দেয়।
শুরুতে আবদুল করিম হাওলাদার নামে এক ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
পরবর্তীতে, ১৯৯০ সালের পর পরিচালনা কমিটি নিয়ে এলাকার দুটি পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় আবদুস ছাত্তার আলীর পক্ষ আবদুল করিম হাওলাদারকে প্রধান শিক্ষক করে চারজন শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নেয়। আর জাফর আলীর পক্ষ সৈয়দ এনায়েত করিমকে প্রধান শিক্ষক ও অপর তিনজনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর ১৯৯৮ সালে ভবন তোলার পর দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এক পক্ষের প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম হাওলাদার জানান, বিদ্যালয়টি নিবন্ধিত হলে তাতে শিক্ষক হিসেবে তিনি ও তার পক্ষের তিনজন সহকারী শিক্ষক নিবন্ধিত শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান। এর বিরুদ্ধে সৈয়দ এনায়েত করিমসহ তার পক্ষের তিন সহকারী শিক্ষক আপত্তি দিয়ে নিজেদের বৈধ দাবি করে শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন।
এরপর তিনি ২০০১ সালে বরিশাল সহকারী জজ আদালতে নিজেদের বৈধ শিক্ষক দাবি করে বেতন-ভাতা পাওয়ার জন্য একটি মামলা করেন। যার রায় তারা পেলেও অপর পক্ষের আপিলের কারণে সেটি এখন উচ্চ আদালতে রয়েছে। আর এর ফলে ২০০১ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
তবে সৈয়দ এনায়েত করিমের পক্ষের দাবি, আবদুল করিম যে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ছিলেন, সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা নিজেরা জমি দিয়ে বর্তমান বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তাদের চেষ্টায়ই বিদ্যালয়টি নিবন্ধিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টিতে পাঠদান বন্ধ থাকায় আশপাশের শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে রয়েছে। যারা এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের সাহেব কোলচর হাজিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধুমচর মাদ্রাসায় গিয়ে পড়াশোনা করছে।
বর্তমনে বিদ্যালয়টির একতলা ভবনের চারটি কক্ষের তিনটিতে পাটকাঠি ও লাকড়ি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বেদে সম্প্রদায়ের একটি পরিবার সেখানে বসবাস করছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবনের মেঝে ও দেয়ালের পলেস্তেরা খসে পড়ছে। একটি কক্ষের ভেতরে থাকা বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত কিছু ফার্নিচারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর বিদ্যালয়ের টয়লেট ও মাঠ আগাছার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া দু’জনের কারোরই এখন আর সরকারি চাকরির বয়স নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমএস/জেডএম