শুধু তাসনিম নয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বসুন্ধরা শাখার এমন আরও ৫০ শিক্ষার্থী রঙ তুলির আঁচড়ে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে গ্রামবাংলার চিত্র। শুধু ছবি আঁকিয়েই শেষ নয়, এই ড্রামে গাছ লাগিয়ে স্কুলে ছাদবাগান করবে এই শিক্ষার্থীরাই।
সেইলর ও গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ। রোববার (৮ এপ্রিল) ‘প্ল্যান্ট ফর প্ল্যানেট’ শিরোনামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক এবং নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম।
সবুজের প্রতি এই শিশু শিক্ষার্থীদের ভালোবাসাকে উৎসাহ দিয়ে নঈম নিজাম বলেন, শহরের বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখা এবং সবুজ বাংলাদেশ তোমাদের হাত ধরেই টিকে থাকবে। মেয়েরা সব অসাধ্যকে সাধন করতে পারে, জয় তাদের সুনিশ্চিত। যে মা তার সন্তানকে দেশ বাঁচাতে যুদ্ধে পাঠাতে পারেন, সেই মা অবশ্যই সবুজ দেশও গড়তে পারেন।
এসময় মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার লাকসাম পশ্চিমগাঁও গ্রামের এক জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী। ওই সময় বাঙালি মুসলিম নারী হয়ে জমিদারীর দায়িত্বগ্রহণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ১৮৭৩ সালে নারীশিক্ষা প্রসারে কুমিল্লায় তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এটি উপমহাদেশে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের প্রাচীনতম স্কুলগুলোর অন্যতম। কালক্রমে এটি একটি কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। এর নাম এখন নবাব ফয়জুন্নেসা কলেজ। এছাড়া তিনি ‘ফয়জুন্নেসা জেনানা হাসপাতাল’ নামে একটি চিকিৎসালয়সহ মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, দিঘি-পুষ্করিণী খননে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। তার এই জনহিতৈষীমূলক কাজের পুরস্কারস্বরূপ মহারানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে তাকে ‘নবাব’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনিই বাংলার প্রথম নারী যিনি এই উপাধি লাভ করেন। ২০০৪ সালে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।
নারীদের এই আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে সব বাধা পেরিয়ে সাফ্যল্য ছিনিয়ে আনতে শুভকামনা জানান নঈম নিজাম।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি ও পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান প্রভাষ আমিন, সময় টিভির ডিজিটাল কনটেন্ট ইনচার্জ আনোয়ার হক, ইপিওলিওন গ্রুপের পরিচালক কিশোয়ার জাহান প্রমুখ।
আয়োজক সংগঠন গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোক্তা আহসান রনির সঞ্চালনায় শিশুদের বিভিন্ন ফুলের পরিচিতিমূলক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ছাদবাগানে সাফল্য দেখানো তিনটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। কুইজ প্রতিযোগিতা এবং চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহণকারী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বসুন্ধরা শাখার শিক্ষার্থীদের পছন্দমত সবজি উপহার হিসেবে দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে আহসান রনি বলেন, যেসব ড্রাম পরিত্যক্ত হিসেবে ছুড়ে ফেলা হয় সেগুলোতেই এই শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো চিত্রাঙ্কন করছে। এইসব ড্রামের গায়ে তাদের নাম ও রোল নম্বর লেখা থাকবে। এরপর এই ড্রামগুলোতে মাটি ভরাট করে শিক্ষার্থীরা গাছ লাগাবে এবং স্কুলের ছাদবাগানে রেখে সেটার যত্নআত্তি তারাই করবে। শিশুদের সঙ্গে সবুজের হাতে-কলমে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।
এর আগে ঢাকার ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এইচএ/জেএম