জানা গেছে, কুয়েটের বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার (০২ আগস্ট)।
কুয়েট ভিসি ২০১০ সালের ২১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে প্রথম যোগদান করেন।
আচার্য দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেবেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার মান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবেন তা নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন।
কুয়েটের ভিসি পদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ পদে দায়িত্ব পেতে গ্রুপিং লবিং শুরু করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক। এরই মধ্যে নতুন ভিসি নিয়োগ নিয়ে কুয়েটে চলছে এক ধরনের ঠাণ্ডা লড়াই। বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা । কে হচ্ছেন পরবর্তী ভিসি তা নিয়ে চলছে নানা জনের নানা মতো।
শিক্ষকদের একটি অংশ চাইছেন কুয়েট থেকেই নতুন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হোক। আর অপর অংশ কুয়েটের ভিসি হিসেবে চাইছেন প্রশাসনিক, একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্বার্থে বাইরে থেকে কাউকে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষক সরকারের উচ্চপর্যায়ে লবিং চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রো-ভিসির পদটিও কুয়েটের জন্মলগ্ন অর্থাৎ ২০০৩ সাল থেকে খালি রয়েছে। সেটিরও নিয়োগ চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বেশ কয়েনজন শিক্ষক বলেন, ভিসির পদটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। ভিসি যদি সবার গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি না হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে জটিলতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। কুয়েটের প্রশাসনিক, একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্বার্থে এখানকার যোগ্য কোনো শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় আরো গতিশীল হবে।
রাজনীতির বাইরে থাকা শিক্ষকরা বলছেন, উপাচার্য পদে দলীয় পরিচয়কে মুখ্য বিবেচনায় না নিয়ে কোনো সৎ, নীতিবান, সিনিয়র, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হোক।
সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সহমত প্রকাশ করছেন। তবে আওয়ামীলীগপন্থীদের অধিকাংশই বলছেন, দলীয় শিক্ষকদের মধ্য থেকেই যোগ্য ও প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হবে।
ভিসি পদে যেসব শিক্ষকের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে তারা হলেন- ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির (আইআইসিটি) পরিচালক ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ছাত্র কল্যাণের পরিচালক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া, ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (০২) ভিসি মুহাম্মদ আলমগীরের শেষ কার্যদিবসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিগত আট বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী ধরণের উন্নয়ন করেছেন তা তুলে ধরেন।
এ সময় ভিসি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৩৮০ জন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শিক্ষকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২২ থেকে ১২৫ জন’।
তিনি দাবি করেন, তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কয়েকটি বিভাগ চালু হয়েছে। এ কারণে বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়েছে। ওই আট বছরে কতজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি বেড়েছে। তাই আশানুরূপ কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যেতে পারেননি।
মুহাম্মদ আলমগীর উপাচার্য থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপ-উপাচায ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য কাউকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত আট বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উপ-উপাচার্য প্রয়োজন তা তিনি কখনও অনুভব করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)ও হয়ত প্রয়োজন মনে করেনি। ওই সময়ের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও তার বহুবার দেখা হয়েছে তবে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য প্রয়োজন আছে কী না তা নিয়ে কখনও কথা বলেন নি। এ কারণে পদটি শূন্য রয়েছে। যেহেতু উপ-উপাচার্য নেই তাই শুক্রবার (০৩ আগস্ট) থেকে কুয়েট অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস আগে ইউজিসি’কে ব্যাপারটি অবহিত করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ২০১০ সালের ২১ জুলাই তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ১২টি বিভাগে ২ হাজার ২৭৯ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি ইনস্টিটিউট, ২০টি বিভাগ, ৪ হাজার ৬২৭ জন স্নাতক ও এক হাজার ৭৩ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৮৯৩ জন।
অভিযোগ রয়েছে, স্বজনপ্রীতি ও আওয়ামী লীগের মতাদর্শের বাইরে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এই ৮ বছরে। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শীদেরও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এক প্রকার চেপে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কারণে যোগ্য শিক্ষকরাও শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পদোন্নতি পাননি।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২ , ২০১৮
এমআরএম/এএটি