ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রংপুরে ম‍াদ্রাসার ল্যাব থেকে ২১ ল্যাপটপ চুরি

বেরোবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
রংপুরে ম‍াদ্রাসার ল্যাব থেকে ২১ ল্যাপটপ চুরি আইসিটি লার্নিং সেন্টার থেকে ২১ ল্যাপটপ চুরি। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: রংপুরের উত্তম জাফরগঞ্জ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আইসিটি লার্নিং সেন্টার থেকে রহস্যজনকভাবে ২১টি ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ তুলেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) ঈদুল আজহার ছুটি শেষে মাদ্রাসা খোলার পর চুরির ঘটনা সবার নজরে আসে। পরে ২১টির মধ্যে ১০টি ল্যাপটপ পাশের একটি ছাদে পাওয়া যায়।

চুরির ঘটনায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জরুরি বৈঠক করে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির কিছু সদস্যদের যোগসাজসে চুরির এ ঘটনা সাজানো হয়েছে।

বেলা পৌনে ১১টায় রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার এক নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম জাফরগঞ্জ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির পেছনের দরজা সংলগ্ন আইসিটি লার্নিং সেন্টার রুম লোহার কেসি গেটে তালাবদ্ধ। ওই রুমের উপরে এক হাতের কম পরিমাণ টিন কাটা রয়েছে। এর পাশে একটি ছাদে চুরি হওয়া ২১টি ল্যাপটপের মধ্যে ১০টি সেখানে পড়ে রয়েছে। সাংবাদিক ও পুলিশের উপস্থিতিতে আইসিটি রুমের কেসি গেটের তালা খুলে দিলে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখান একটি কম্পিউটারও নেই। উপরে যে পরিমাণ কাটা টিন রয়েছে তাতে মানুষের উঠা-নামা বা ভেতরে ঢোকা অসম্ভব। এমন অবস্থায় চুরির বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান ও অধ্যক্ষ আবদুস সালাম রব্বানী।  

চুরির এ ঘটনা সম্পর্কে মাদ্রাসার নৈশ্যপ্রহরী আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও (৩১ আগস্ট) নাইট ডিউটি করে শনিবার সকালে বাড়ি চলে যাই। পরে দফতরি এনামুল আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এ ঘটনাটি জানান।

তিনি বলেন, আইসিটি রুম খোলার চাবি শুধুমাত্র অধ্যক্ষ স্যার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষকের কাছে থাকে। তারাও তো কিছু বলতে পারছেন না। চুরির এ ঘটনাটি আমার কাছে রহস্যজনক।

আয়া রিনা বেগম বলেন, আমি সকালে ঝাড়ু দিতে গিয়ে দেখি টেবিলের উপর একটি ল্যাপটপও নেই। সঙ্গে সঙ্গে অধ্যক্ষ স্যারকে ডেকে নিয়ে যাই। তারা রুমের ভেতর দেখেছেন। এগুলো চুরি হয়েছে, না অন্য কিছু হয়েছে স্যাররাই ভালো জানেন।

এদিকে, স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবক জরুহুল হক লেবু, নুরুজ্জামান ভুট্টু, হোসেন মিয়া, মাহফুজার রহমান সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ কমিটি কোনো উন্নয়ন না করে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। তারা ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে আইসিটি ল্যাব থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে রেখে চুরির ঘটনা সাজিয়েছেন। চোর ল্যাব থেকে ২১টি ল্যাপটপ বাইরে বের করে ১১টি নিয়ে গেল, বাকি ১০টি রেখে গেল, এটা রহস্যজনক। তাছাড়া ল্যাবের রুমের উপরের টিন যতোটুকো কাটা রয়েছে, তাতে মানুষের ভেতরে ঢোকা সম্ভব নয়। এটা চুরি নয়, পরিকল্পিতভাবে আইসিটি ল্যাব থেকে ল্যাপটপ আত্মসাতের ঘটনা। স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে জরুরি সভা করেছি। পুলিশ প্রশাসনকে চুরির বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে জড়িত করতে চাই না।

অন্যদিকে অধ্যক্ষ আবদুস সালাম রব্বানী বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। সকালে মাদ্রাসায় এসে কম্পিউটার চুরির বিষয়টি জেনেছি। আমি বুঝতে পারছি না, নৈশ্যপ্রহরী ওই ল্যাবের পাশে থাকার পরও কিভাবে এতোগুলো ল্যাপটপ চুরি হয়ে গেল।

রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখতারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি চুরির বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।