ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঘর থাকলেও নেই শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৯
ঘর থাকলেও নেই শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ লালমনিরহাটের নারিকেল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সববি চাষ করা হয়েছে । ছবি-বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: কাগজে কলমে ৭৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে লালমনিরহাটের নারিকেল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ ১০ বছরে  লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ) ঘরে পরিণত হয়েছে। 

বিনামূল্যের বইসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে বিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠান সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী।

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের বলিরাম গ্রামে ১৯৯০ সালে নারিকেল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিছুদিন ভালোভাবে পাঠদান চললেও পাশে আরো তিনটি বিদ্যালয় থাকায়  বিগত এক যুগ ধরে পাঠদান বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর প্রতিষ্ঠাকালীন সহকারী শিক্ষক স্থানীয় বিএনপি নেতা সেকেন্দার আলী কৌশলে বিদ্যালয়ের নামে দান করা ৩৪ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। পরে ২০০৮ সালের দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের ৩০ শতাংশ জমি জবর দখল করে সেখানে বিদ্যালয়টি প্রতিস্থাপন করে নিজেই সভাপতির পদ দখলে নেন। প্রধান শিক্ষক এবং দুই ছেলে ও এক পুত্রবধূকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।

শুরু থেকে কাগজে কলমে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাঠদান দেখানো হলেও বাস্তবে বিদ্যালয়টি গুদাম ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদিকে, নিজের জমি ফিরে পেতে জমির প্রকৃত মালিক মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক মামলা দায়ের করে নিজের পক্ষে আদালতের রায় পান। কিন্তু তারপরও তাকে জমি ফিরিয়ে দেননি সেকেন্দার আলী। বিদ্যালয়টির বারান্দা থেকে পুরো মাঠে সবজি চাষাবাদ করেছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। লালমনিরহাটের নারিকেল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষগুলোতে রাখা হয়েছে লাকড়ি।  ছবি-বাংলানিউজ

স্থানীয়দের অভিযোগে সম্প্রতি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে সেখানে পাঠদানের কোনো আলামত না পেয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ। ফলে বিদ্যালয়টির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেছেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৪৮টি। জাতীয়করণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৭টি। যার মধ্যে একটি নারিকেল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি হিসেব মতে এ বিদ্যালয়ে ৭৭ জন শিক্ষার্থী পড়ছে। গত বছর সমাপনী পরীক্ষায়ও দু’জন শিক্ষার্থী পাস করেছে ওই বিদ্যালয় থেকে।  

কিন্তু বাস্তবে দীর্ঘ এক যুগ ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, উপবৃত্তি ব্যবস্থা না থাকায় ১০ বছর ধরে শিক্ষার্থীর অভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে জানান, সেকেন্দার আলীর কাজই জমি জবর দখল করা। ওই প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দিয়ে দু’জন কৃষকের জমি জবর দখল করে নিজে ভোগ করছেন। শিক্ষার্থী না থাকলেও কাগজে কলমে তার পুরো পরিবার এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বনে গেছেন। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

আদালতের তিনটি রায় পেয়েও জমি উদ্ধারে ব্যর্থ মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিট করে জমিটি দখলে নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিস্থাপন করেছেন বিএনপি নেতা সেকেন্দার আলী।  

বিদ্যালয়টির সভাপতি সেকেন্দার আলী বাংলানিউজকে জানান, জবর দখল নয়, জমিটি তিনি কিনে বিদ্যালয় করেছেন।  

তবে দেখতে চাইলে জমি কেনার বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। পাঠদান বন্ধ কেন-এমন প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর সেকেন্দার আলী দিতে পারেননি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী বাংলানিউজকে জানান, জাতীয়করণের জন্য প্রক্রিয়াধীন এ বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে পাঠদানের কোনো পরিবেশ পাওয়া যায়নি। তাই নতুন বইসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ নিয়ে কেন প্রতারণা করা হয়েছে সে ব্যাখ্যা চেয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জবাব এলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৯
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।