ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ববির উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৯
ববির উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ববিতে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের সন্তান’ বলে গালি দেওয়ার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা।

 

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে তারা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, গত তিন বছর যাবত বর্তমান উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হক জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেননি।

উপাচার্য সামিয়ানা ঘেরাও প্যান্ডেলে বসে চা চক্র করেন যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো জাতীয় দিবসগুলোতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়।   গত ২৬ মার্চ উপাচার্য’র এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তার অন্যায় এবং স্বাধীনতা বিরোধী আয়োজনের প্রতিবাদ করেছেন।

ধারাবাহিকতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য’র নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও তার বক্তব্য প্রত্যাহারের মুখ্য দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ২৫ মার্চ বাঙালির ইতিহাসে এক কালো দিন। এই কালো রাতেই পাকিস্তানি হানাদারদের পৈশাচিক হামলায় শত-সহস্র মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার রাজপথ। এটি বাঙালি বেদনার, দুঃখের ও বিলাপের দিন। এমন একদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মাউন্টেন ডিউ নাম বহুজাতিক বেনিয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে হিন্দি গান বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে তাদের বিপণন প্রচারণা করার সুযোগ দিয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডে আমরা(শিক্ষার্থী) ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়েছি। অথচ এই একইস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনুমতি পায় না।

বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে, ভয় পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত ২টায় চোরের মতো কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম এবং হল বন্ধ ঘোষণা করেন। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-হল ছেড়ে একজন ছাত্র-ছাত্রীও কোথাও যাবে না। এরই প্রেক্ষিতে যদি কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, আমরা দ্বিধাহীন চিত্ত ও স্পষ্টভাবে বলতে চাই- এই স্বাধীনতা বিরোধী উপাচার্যকে অবশ্যই তার বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতায় তিনি পালানোর পথ পাবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, উপাচার্য’র অনৈতিক কর্মকাণ্ড এখানেই শেষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি এক অর্থ আত্মসাতের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছেন। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হক ও তার সিন্ডিকেটের তিন বছর ১০ মাসের বিভিন্ন দুর্নীতির খন্ডচিত্র লিখিত আকারে ১১ পয়েন্টে তুলে ধরেন। এরমধ্যে টিএ/ডিএ ও আপ্যায়ন বাবদ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, উপাচার্য’র তিনজন গাড়িচালক ব্যবহার করা, গেস্ট হাউস হিসেবে ভবন ভাড়া নিয়ে গেস্ট না রেখে কক্ষগুলো নিজ দখলে রাখা, অবৈধভাবে ও অনিয়মের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক, দৈনিক ভিত্তিকসহ বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ দেওয়া, পদোন্নতি দেওয়া, স্নাতক শ্রেণির ভর্তির টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করা, শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট ক্লাস রুম না থাকার পরেও ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিসির নতুন অফিস বানানোর অভিযোগ রয়েছে।

এসময় শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, জরিমানার নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযৌক্তিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম, সিফাত আহমেদ, আলামিনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা পূর্ব সিদ্ধান্ত হল ত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনুযায়ী স্ব-স্ব হলে গিয়ে অবস্থান নেয়।  তবে বিকেল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের সব হলের আবা‌সিক ছাত্র-ছাত্রী‌দের হল ত্যা‌গের নি‌র্দেশে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

উপাচার্য বৃহস্পতিবার ঢাকায় অবস্থান করলেও তিনি সাংবাদিকদের মোবাইলফোনে জানান, ক্যাম্পা‌সের প‌রি‌স্থি‌তি স্বাভা‌বিক করতে ও অনাকা‌ঙ্খিত ঘটনা এড়া‌তে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হ‌য়ে‌ছে।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৯
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।