২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর পিএসসির সুপারিশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে বিসিএস ক্যাডারের সংখ্যা ২৭টি থেকে কমে হয়েছে ২৬টি।
বর্তমানে বিসিএসের ক্যাডারগুলোর মধ্যে ১৩টি সাধারণ ও ১৩টি পেশাগত/কারিগরি ক্যাডার রয়েছে। প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ, সমবায় বা কর ক্যাডারের মতোই বিসিএস (তথ্য) একটি সাধারণ ক্যাডার। তবে এটি অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারের মতো নয়। এর প্রকৃতি কিছুটা আজব! এ একটি সাধারণ ক্যাডারের রয়েছে তিনটি ভাগ। এ তিন ভাগে গণযোগাযোগ ও তথ্য অধিদফতরের সহকারী তথ্য অফিসার/সহকারী পরিচালক, বেতারে সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) ও সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
এ তিনটি অংশের মধ্যে পারস্পারিক কোনো সমন্বয় নেই। তিনটিই যেন আলাদা আলাদা ক্যাডার। এ নিয়ে বিসিএসের (তথ্য) মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। পাশাপাশি রয়েছে একটি কারিগরি অংশ, যাদের সহকারী বেতার প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বলা চলে, শুধু বেতারেই রয়েছে একটি সাধারণ ক্যাডারের দু’টি স্বতন্ত্র অংশ ও একটি কারিগরি অংশ, অর্থাৎ একপ্রকারে তিনটি স্বতন্ত্র ক্যাডার। তাদের মধ্যে ক্যাডার সম্পৃক্ত কোনো বিষয়ে সমন্বয় বা মিল নেই।
সম্প্রতি বিসিএসের (তথ্য) এ ভাগগুলোর মধ্যে পারস্পারিক রেষারেষি চরম আকার ধারণ করেছে। গণযোগাযোগ ও তথ্য অধিদফতরের অংশ তাদের তথ্য সাধারণ বলে দাবি করছে, এ কারণে বেতার অংশকে বেতার ক্যাডার নামে অভিহিত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বেতার ক্যাডার নামে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কোনো ক্যাডার নেই ও তথ্য সাধারণ বলেও কোনো ক্যাডার নেই। বিসিএস (তথ্য) হচ্ছে আরও কয়েকটি সাধারণ ক্যাডারের মতো একটি ক্যাডার, যার অন্যান্য ক্যাডারের মতো একটি কারিগরি অংশও রয়েছে।
বেতারের তিনটি অংশের মধ্যেও রয়েছে চরম অসন্তোষ, কেননা পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে চরম অসঙ্গতি। বার্তা ও প্রকৌশল শাখায় ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হলেও অনুষ্ঠান বিভাগের ২৮তম ব্যাচেরই এখনও পদোন্নতি হচ্ছে না।
এছাড়া, সার্বিকভাবে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারটি অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় বঞ্চিত ক্যাডার। অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতো পিএসসির মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিলেও তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের কারও সময়মতো পদোন্নতি হচ্ছে না।
ক্যাডারের লাইনপোস্টে যেমন সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তেমনি উপ-সচিব হিসেবে অপশন দিয়েও যথাসময়ে পদোন্নতি হয় না। বছরের পর বছর অপেক্ষায় বসে থেকে প্রশাসন ক্যাডারের জুনিয়রদের সঙ্গে তথ্য ক্যাডারের সিনিয়রদের পদোন্নতি নিতে হয়। আর ক্যাডারের লাইনপোস্টে উপরের দিকে পদের সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় বহু সিনিয়র তথ্য অফিসার চাকরির ২০ বছরেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। সান্ত্বনা হিসেবে শুধু সিনিয়র স্কেল নিয়ে বসে আছেন! তাই এ ক্যাডারের ১৯৮২, ৮৪, ৯ম, ১৩তম, ১৮তম ও ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যথাস্থানে পদায়ন ও পদোন্নতি পাওয়া নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। সবাইকেই কম-বেশি আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। সিনিয়রদের এ অবস্থা দেখে জুনিয়র কয়েকটি ব্যাচের কর্মকর্তারাও চরম হতাশায় রয়েছেন।
বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের বাংলাদেশ বেতারের বার্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আইসিটি/ইন্টারনেট বিপ্লবের ফলে মিডিয়ার তিনটি ধারা (অডিও, ভিডিও ও নিউজপেপার) একীভূত হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে হয়তো বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি ও পিআইডির কাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। অযৌক্তিক এসব বিভাজনের ফলে একটি প্রফেশনের মধ্যে রেষারেষি হচ্ছে। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পেশাগত উন্নয়ন হচ্ছে না। আন্তঃক্যাডার (একই ক্যাডারের মধ্যে) বৈষম্য হচ্ছে ও ক্যাডারে শৃঙ্খলা থাকছে না। তাই বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারকে সংস্কার করে ঢেলে সাজানো জরুরি। সমন্বিত ও একীভূত তথ্য ক্যাডার সময়ের দাবি।
বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জসিম বলেন, বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্য নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রয়োজন। বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে ব্যাপক বিভেদ, বিভক্তি, বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্য বিরাজমান। একটি সাধারণ ক্যাডারের মধ্যে বিভাজন এ ক্যাডারের উন্নয়নের অন্তরায়। এ ক্যাডারে দু’টি বিভাজন (সাধারণ ও প্রকৌশল) যৌক্তিক। প্রকৌশলী বাদে অন্য তিন বিভাগের কাজের ধরন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সিভিল সার্ভিসের সকল ওরিয়েন্টেশন এক ও অভিন্ন। এ অফিসারদের সবাই মিডিয়া, কমিউনিকেশন ও পাবলিক রিলেশন (গণসংযোগ) নিয়ে কাজ করে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এমআইএস/একে