ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এসএসসি’র ফলাফলে গণিতের ধাক্কা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩২ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৯
এসএসসি’র ফলাফলে গণিতের ধাক্কা! বোর্ডে টানানো তালিকায় নিজের ফল পরখ করে নিচ্ছে ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা/ছবি- ডি এইচ বাদল

ঢাকা: মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় এবারের ফলাফলে সব বিষয়ে উন্নতি হলেও গণিত বিষয়ের ফলাফল সার্বিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গণিতের পাশাপাশি সব বোর্ডে ইংরেজি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মানবিক বিভাগের ফল এই শিক্ষা বোর্ডকে নিচে নামিয়েছে।

বিপরীতে ইংরেজি ও গণিতের মতো ‘কঠিন’ বিষয়ে ভালো ফলের কারণে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। গণিতের ফলের কারণে এবারও তলানিতে পড়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ডও।

গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে এবছর দশ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ হওয়ায় তার কৃতিত্ব শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উত্তীর্ণদের অভিনন্দন এবং অনুত্তীর্ণদের আবারো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় বসতে আহ্বান জানিয়েছেন।

সার্বিক ফলাফল নিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, গতবারের তুলনায় ফলাফল ভালো।

গণিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ২১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮৫ দশমিক ২১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৮ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সিলেটে ৭৬ দশমিক ৬১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এছাড়া গণিতে এবার পাসের হার রাজশাহীতে ৯৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যশোরে ৯৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৮৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং কারিগরিতে ৮৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এসব বোর্ডে গণিতে পাসের হার বেড়েছে।

তুলনা করে দেখা যায়, ইংরেজিতে ঢাকায় ৯১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, যশোরে ৯৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বরিশালে ৯৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, সিলেটে ৯৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৯৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মাদরাসায় ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং কারিগরিতে ৯৬ দশমিক ১৭ শতাংশ পাস করেছে।

বাংলায় কারিগরি বোর্ডে ৯৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ও বরিশালে ৯৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছাড়া সব বোর্ডেই ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

পদার্থ বিজ্ঞানে কারিগরিতে সর্বনিম্ন পাসের হার ৯২ দশমিক ২১ শতাংশ হলেও অন্যান্য বোর্ডে পাসের হার ৯৬ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশ পার করে শতভাগ ছুঁই ছুঁই করছে।

রসায়নে কারিগরিতে সর্বনিম্ন ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও মাদরাসায় ৯৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৩ দশমিক ১৬ শতাংশ হলেও অন্যান্য বোর্ডে পাসের হার ৯৫ থেকে প্রায় ৯৯ শতাংশ স্পর্শ করেছে।

আর আইসিটি বিভাগে কুমিল্লায় ৯৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বরিশালে ৯৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সিলেটে ৯৭ দশমিক ০৬ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৯৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও কারিগরি বোর্ডে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ ছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, দিনাজপুরে ৯৯ শতাংশ পাস করেছে।

বাংলা বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সর্বনিম্ন ৯৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ও বরিশালে ৯৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছাড়া সব বোর্ডে পাসের হার ৯৯ শতাংশের বেশি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার কম হওয়ার কারণ গতবছর গণিতে যে পাস করেছিল তার থেকে এবার ২ শতাংশ কম পাস করেছে। মানবিকেও গতবছরের তুলনায় ৩ শতাংশ কম পাস করেছে। এই কম পাসের প্রভাব সার্বিক ফলের উপরে পড়েছে।

‘এই ফল অস্বাভাবিক কিছু না, দাবি করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন কারণে ফল একটু হেরফের হয়েছে’।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড গতবারও ভালো ফল করেছিল জানিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি জিয়াউল বলেন, কুমিল্লায় এবার ইংরেজি, গণিত এবং হিসাব বিজ্ঞানে উন্নতির কারণে ফল ভালো হয়েছে। এতে সার্বিক ফলাফলে প্রভাবিত হয়েছে।

আর সিলেট বোর্ড গতবারও খারাপ করেছিল। সিলেটে গণিতে ৭৫ শতাংশ পাস ওই বোর্ডের ফলে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে।

রাজশাহী বোর্ডে গত বছরের ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ থেকে এবার পাসের হার বেড়ে হয়েছে ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, পাসের হারে এবারের দেশসেরা রাজশাহী।  

ফল মূল্যায়ন নিয়ে রাজশাহী বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. আনারুল হক প্রাং বলেন, সময়ের মধ্যে সিলেবাস সমাপ্ত, কঠোর মনিটরিং, গণিত ও ইংরেজিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এবার আশানুরূপ ফলাফল হয়েছে। কঠোর নির্দেশনার কারণে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে, এমন প্রতিষ্ঠান এবার মাত্র একটি। এই স্কুলটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।

অন্যদিকে, গণিতে ভরাডুবিতে বোর্ডগুলোর মধ্যে সবার নিচে রয়েছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, গণিতে বেশি ফেল করায় সূচকে ২ শতাংশ পিছিয়ে সিলেট বোর্ড। এবার গণিতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, গত বছর ছিল ৭৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গণিতে বেশি ফেল করার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, লটারিতে আমাদের বোর্ডের প্রশ্ন আসেনি। যে কারণে প্রশ্নপত্র এবার বেশি কঠিন ছিল শিক্ষার্থী ও হল সুপাররা জানিয়েছিলেন।  

‘সিলেটের শিক্ষার্থীরা গণিতে দুর্বল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গণিতে আরও ভালো করা প্রয়োজন। এজন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের পাশাপাশি ক্লাস রুমেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।  

কবির আহমদ বলেন, গণিতে ভুল করলেই মার্ক কাটা হয়। অন্য থিওরিটিক্যাল বিষয়ে হয়তো দু/চার মার্ক দেওয়া যেতো। সেটা গণিতে সম্ভব হয় না।

সিলেটে পাসের হার সবচেয়ে কম হওয়ার কারণ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেখানে গণিতে পাসের হার কম। ঢাকা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার গতবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। মানবিকে গতবছরের তুলনায় পাস কমেছে ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যেহেতু মোট পরীক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ মানবিকের পরীক্ষার্থী, তার প্রভাব পুরো পাসের হারের উপরে কিছুটা পড়েছে।

বিভিন্ন বোর্ডে পাসের হারে ভিন্নতা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটি মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোথাও কোথাও বেড়েছে, কোথাও কমেছে। যেখানে বেশি বেড়েছে সেখানে কোনো ধরনের শিথিলতা ছিল না।

যেসব বোর্ড এগিয়ে যাচ্ছে সেখান থেকে আমাদের শেখার আছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে একটি বোর্ড ভালো করলে নিশ্চয়ই ভালো কিছু কাজ করছে। এসব পরিসংখ্যান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।